ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল ১ এর আওতায় থাকা মিরপুর রোডের অনেকাংশ এলাকায় নেই ডিভাইডার। সম্প্রতি এসব অংশে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বাঁশ ও কাঁটাতার ব্যবহার করে দেওয়া হয়েছে মূল সড়কের ডিভাইডার। তবে দুই সড়কের মাঝখানে স্থায়ী ও মজবুত লোহার কিংবা স্টিলের ডিভাইডারের বদলে বাঁশ ও কাঁটাতার ব্যবহার কতোটা যৌক্তিক?
যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছে এটা সাময়ীক সময়ের জন্য। কিন্তু কবে নাগাদ এসব এলাকাগুলোতে স্থায়ীভাবে ডিভাইডার স্থাপন করবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে ডিএসসিসি’র আওতাধীন অঞ্চল ১ এর ধানমণ্ডি-২৭, কলাবাগান, সাইন্সল্যাব ও শাহবাগ এলাকায় এসব বাঁশের সাথে কাঁটাতার ব্যবহার করা ডিভাইডার লক্ষ্য করা যায়। শুধু এসব এলাকাতেই নয় উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা সব এলাকাতেই এভাবে ডিভাইডার বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের পর রাজধানীর সব এলাকায় দ্রুত ডিভাইডার দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। ফলে অল্প সময়ে এটি বাস্তবায়নের নির্দেশনা থাকায় তড়িঘরি করেই বাঁশ ও কাঁটাতার ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া স্থায়ীভাবে ডিভাইডার স্থাপনের জন্য বাজেট প্রস্তুত করে বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ থাকায় এই বাঁশ ও কাঁটাতার ব্যবহার করা হয় বলে ডিএসসিসি’র একটি সূত্র বিডিমর্নিংকে জানায়।
মূল সড়কসহ সব রাস্তায় এভাবে বাঁশ ব্যবহার করাটা একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয়। কেননা বাঁশের স্থায়ীত্ব কম, খুব অল্প সময়েই তা ভেঙ্গে পড়বে। অন্যদিকে লোহার স্থায়ী ডিভাইডার সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকটা কমিয়ে আনে। তাছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব কাঁটাতার চুরি হয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।
জাহিদুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী বিডিমর্নিংকে বলেন, ‘এভাবে বাঁশ ব্যবহার করাটা হাস্যকর বিষয়। কেননা এখানে শক্তপোক্ত সামগ্রী দিয়ে ডিভাইডার স্থাপন করা দরকার। তা না করে কোন রকমের বাঁশ আর কাঁটাতার দিয়ে বিষয়টা সংশ্লিষ্টরা নিজেদের দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছ’।
এদিকে বাঁশ ব্যবহারেই অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে বিভিন্ন এলাকায়। লক্ষ্য করা যায়, জেব্রা ক্রসিং বাদে অন্য রাস্তা পারাপারের জায়গা বন্ধ করে কাঁটাতার দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে এক বাঁশ থেকে অন্য বাঁশের দূরুত্ব বেশি রেখে কাঁটাতার বাধা হয়েছে। এতে প্রতি ৪ খণ্ড বাঁশের বদলে ৩ খণ্ড ব্যবহার করেই কাঁটাতার আটকে দেয়া হয়েছে।
আব্দুল কালাম নামে এক পথচারী অভিযোগ করে বলেন, সাইন্সল্যাব এলাকা থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ফুটওভার ব্রিজ নেই। বাঁটা সিগনাল ও কাটাবনের মোড় ছাড়া কয়েকটা জায়গা দিয়ে রাস্তা পার হওয়া যেত। কিন্তু কাঁটাতার ও বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে স্থানীয়রা রাস্তা পারাপারের জন্য কয়েক জায়গার কাঁটাতার কেটে ফেলেছে।
রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে এভাবে কাঁটাতার ও বাঁশ ব্যবহার করা যুক্তিসঙ্গত নয় জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শারমিন জাহান সাথি বিডিমর্নিংকে বলেন, মূল সড়কের মাঝখানে স্টিল কিংবা লোহার স্থায়ী ডিভাইডার সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অনেকটা সহায়ক। কিন্তু এভাবে বাঁশের ব্যবহার একেবারেই মানানসই হয়নি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১ এর প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জয় বিডিমর্নিংকে জানান, বাঁশ ও কাঁটাতার ব্যবহার করে যে ডিভাইডার তৈরি করেছি সেটা সীমিত সময়ের জন্য অস্থায়ীভাবেই করা হয়েছে। এই রোড (মিরপুর রোড) নিয়ে ‘আদর্শ সড়ক’ হিসেবে তৈরি করতে আমাদের একটা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এতে চলাচলকারী যাত্রী এবং পথচারীদের সব ধরনের আধুনিক সুবিধা যুক্ত করা হবে। ‘আদর্শ সড়ক’ তৈরির কাজ শুরু করার আগ পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে এসব এলাকার ফাঁকা অংশগুলো পুরণ করতেই বাঁশ ও কাঁটাতার ব্যবহার করা হয়েছে।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এসব বাঁশ ও কাঁটাতার চুরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি আরো বলেন, আমারা আমাদের দ্বায়িত্ব পালন করেছি। নিরাপত্তা দেয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ।