বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় ‘তিতলির’ প্রভাব দেশে এখনও চলছে। ২৯১ মিলিসহ সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয়ে আজ শনিবারও দেশের আকাশ মেঘলাসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি স্থল নিম্নচাপ আকারে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থান করছে।
ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার বেগে বয়ে চলা তিতলি ঝড়টি এর আগে ভারতের ওডিশা, অন্ধ্রপ্রদেশে বিস্তৃত ছিল। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীকাকুলাম ও ভিজিয়ানাগারাম জেলায় ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র আঘাতে আটজন নিহত হয়েছেন।
শুধু বাংলাদেশ নয় গেল কয়েক সপ্তাহে বিশ্বের কয়েকটি দেশে ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগ হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প পরবর্তী সুনামি। যাতে প্রায় পনের শতাধিক মানুষ নিহত হয়। এছাড়া আরব সাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় লুবান আঘাত হেনেছে ওমান আর ইয়েমেন উপকূলে। আটলান্টিক সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মাইকেল আঘাত হেনেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। একই সাথে আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট আরেক ঘূর্ণিঝড় সার্জিও আঘাত হেনেছে মেক্সিকো উপকূলে।
দেশে কিছুদিন আগেই শরীয়তপুরের নড়িয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ির কিছু এলাকায় নদীভাঙনে সর্বশান্ত হয়েছেন মানুষ। এর আগে ঘুর্ণিঝড় মোরা, চট্টগ্রামের পাহাড়ধস, হাওড়ের আগাম বন্যা এবং রোহিঙ্গা সংকটের মতো বড় বড় দুর্যোগের মুখোমুখি হয় দেশ। যেগুলো সরকার পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে কমানোর চেষ্টা করছে। যার ফলে কমানো গেছে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি।
গবেষকরা বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি বেড়ে গেলে ঝড় জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ আরও বাড়তে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ।
দেশে যখন তিতলি মোকাবিলায় সরকারের সংশ্লিষ্টরা কাজ করে যাচ্ছেন সেই সময়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপি পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০১৮। ‘কমাতে হলে সম্পদের ক্ষতি,বাড়াতে হবে দুর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতি’ প্রতিবাদ্যকে সামনে রেখে এবার পালিত হচ্ছে দিবসটি।
আজ শনিবার আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেকোনো সময় আকস্মিকভাবে বাংলাদেশে নতুন নতুন দুর্যোগের অবির্ভাব হচ্ছে। আমাদের আগে থেকেই পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে। তা না হলে দুর্যোগ মোকাবিলা করা আমাদের জন্য কঠিন বা দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়াবে।
বর্তমানে সৃষ্ট প্রকৃতিক দুর্যোগের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ছোট বেলায় আমরা দুর্যোগ বলতে বন্যা ও চট্টগ্রামের ঘূর্ণিঝড়কে বুঝতাম। কিন্ত এখন খরা, পাহাড় ধস, নদীভাঙন, শিলাবৃষ্টি দেখছি। এমনকি অনেকে বজ্রপাতে মারাও যাচ্ছেন।
রোহিঙ্গাদেরকে নতুন দুর্যোগ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বলা নেই কওয়া নেই লাখ লাখ রোহিঙ্গা দেশে এসে হাজির। জনদরদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে আশ্রয় দিয়েছেন। মিয়ানমার থেকে বিতারিত হয়ে প্রথমে রোহিঙ্গারা যখন দেশে আসে, সবার তাদের শরীরে ছিল শুধু হাড্ডিসার কঙ্কাল। কিন্তু এখন সবাই নাদুস-নুদুস হয়ে গেছে। মোটা স্বাস্থ্যবান হয়ে গেছে। কোরবানির সময় গরুও কোরবানি করছে।
রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারের উন্নয়ন কাজের কথা উল্লেখ করে ত্রাণমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের আমরা দুই লাখ ২৫ ঘর করে দিয়েছি। ৬ হাজার টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছি এবং ৩০ হাজার গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছি। কেউ বলতে পারবে না, বিনা চিকিৎসায় কিংবা না খেয়ে একটি রোহিঙ্গাও মারা গেছে।
এসময় তিনি রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে চাই উল্লেখ করে বলেন, আমরাও রোহিঙ্গাদের সুরে বলতে চাই। বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানায় রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। আপনারা জনমত তৈরি করুন।
এসময় তিনি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির( সিপিপি) প্রতিনিধিদেরকে নিজ এলাকায় গিয়ে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে অনুরোধ জানানা। বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় আপনারা সবাই নৌকা মার্কায় ভোট চাইবেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুসহ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া উপকূলবর্তী অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির(সিপিপি) ৮০ জন কর্মীকে দুর্যোগ মোকবিলায় ভূমিকা রাখায় প্রথম বারের মতো পুরস্কার প্রদান করেছে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুর্যোগ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সশস্ত্র বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, ইউএনডিপি, ইউএনএইচসিআরসহ প্রায় ৩০টির বেশি সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। প্রদর্শনীতে দুর্যোগ মোকাবিলায় স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা, কার্যক্রম ও কর্মপদ্ধতি লিফলেট ও ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়েছে।