গত কয়েকদিন ধরে সংবাদের শিরোনামে ঘূর্ণিঝড় তিতলি । ভারতের অন্ধ্র ও ওড়িশা উপকূল তছনছ করে দাপট চালিয়েছে তিতলি । প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক মানুষ । ভারি বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিবহণ ব্যবস্থা । তবে এমন ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের এরকম নাম কেন ?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মৌসুমী বায়ু প্রভাবিত দেশগুলিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের কাজ শুরু হয় । মূলত পূর্বাভাসের সুবিধার জন্য এই নামকরণের প্রচলন শুরু হয় ।
এই বিষয়ে রাষ্ট্রসংঘের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল চূড়ান্ত নামকরণের কাজটি করে থাকে । ঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে প্যানেলের সদস্য রাষ্ট্রগুলি পর্যায়ক্রমে নাম পাঠিয়ে থাকে যার মধ্যে থেকে একটি নাম বেছে নেওয়া হয় ।
প্রসঙ্গত, ভারত, মালদ্বীপ, পাকিস্তান,শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও মায়ানমার থেকে আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড়ের নাম প্রস্তাব করা হয় । মোট ৬৪ টি নামের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হয় একটি নাম ।
তিতলি একটি হিন্দি শব্দ যার অর্থ হল প্রজাপতি । প্যানেলের তালিকা অনুযায়ীই এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হয়েছে তিতলি । এই নামটির প্রস্তাব করেছিল প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান থেকে । পরের ঘূর্ণিঝড়টির নাম নেওয়া হবে তালিকার পরের নাম থেকে ।
এরপরের ঝড়টির নাম হবে গাজা, থাইল্যান্ডের প্রস্তাব অনুসারে। এ ছাড়া এ অঞ্চলের জন্য আরও ৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেগুলো একেক করে একেকটি ঝড়ের নাম দেয়া হবে। গাজার পর আসবে ফেতাই, এ নামটি শ্রীলঙ্কার দেয়া। এরপর আসতে থাকবে- ফানি (বাংলাদেশ), ভায়ু (ভারত), হিকা (মালদ্বীপ), কিয়ার (মিয়ানমার), মহা (ওমান), বুলবুল (পাকিস্তান), পাবান (থাইল্যান্ড), আম্ফান (শ্রীলঙ্কা)।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় তিতলির তাণ্ডবে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অন্ধ্রপ্রদেশে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রদেশের শ্রীকাকুলাম ও বিজয়নগরাম জেলায় ঘূর্ণিঝড় তিতলি আঘাত হানলে অন্তত ৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিবহণ ব্যবস্থা । বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের পার্শ্ববর্তী উড়িষ্যায় আঘাত হানে তিতলি। এ সময় ঘণ্টায় ১২৫ কিলোমিটারের বেশি বেগে বাতাসের পাশাপাশি ভারি বৃষ্টিপাত হয়।
তবে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পরেই ক্রমশ নিজের শক্তি হারাবে তিতলি ।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় তিতলি ছাড়াও এই একই সময়ে বিশ্বে আরও দু’টি ঘূর্ণিঝড় সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে ঘূর্ণিঝড় মাইকেল যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হেনেছে আর ভারতেই আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় লুবান।
সবমিলিয়ে এ বছরের দশ মাসেই ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০টির বেশি ঝড়ের মুখে পড়তে হয়েছে এ পৃথিবীকে। আশঙ্কা রয়েছে, বছরের বাকি দু’মাসে কেবল প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতেই সাত থেকে ১১টি সাইক্লোন তৈরি হতে পারে, যার মধ্যে তিন থেকে চারটি হবে বড় ধরনের। এসব ছাড়াও ভূমিকম্প, বনের আগুন, ভূমি ধস এবং বন্যার ঘটনা তো রয়েছেই।