উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে এককভাবে আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের চিন্তা করছে দক্ষিণ কোরিয়া। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ও পারমাণবিক সংকট দূরীকরণের উদ্দেশ্যেই এমন পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাং কিয়ুং-হোয়া।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ড ডোনাল্ড ট্রাম্প সিউলের এ সিদ্ধান্তকে একতরফা আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ওয়াশিংটনের অনুমতি ছাড়া পিয়ংইয়ংয়ের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার এখতিয়ার কারও নেই। আগামী মাসের শুরুতেই উত্তর কোরীয় নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন বলেও জানান ট্রাম্প।
এদিকে, কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায়, মস্কোতে বৈঠক করেছেন, রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনের দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন কবে এবং কোথায় অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে যখন চলছে জোর আলোচনা। ঠিক তখনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী ৬ই নভেম্বর মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরই কিমের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।
এ অবস্থায় দুই কোরিয়ার বন্ধন আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার কথা ভাবছে দক্ষিণ কোরিয়া। বুধবার দক্ষিণের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাং কিয়ুং-হোয়া এ কথা জানান। এতে করে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গতি আসবে, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন।
তবে এক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া এককভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। উত্তর কোরিয়া পুরোপুরি পরমাণু অস্ত্রমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়া হবে না বলেও জানান ট্রাম্প।
ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়ে উত্তর কোরিয়ার ওপর চাপ অব্যাহত রাখার কথা বলেছে অস্ট্রেলিয়া ও জাপানও। বুধবার জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অস্ট্রেলিয়া সফরকালে দুই দেশের প্রতিনিধি উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে আলোচনা করেন।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিস পেনি বলেন, ‘অবরোধ আরোপের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগই পারে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করতে। আমরা সে বিষয়টি নিয়েই কথা বলেছি। আমরা পরমাণু অস্ত্রমুক্ত উত্তর কোরিয়া দেখতে চাই।’
জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাকিশি আইওয়া বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এক থাকতে হবে। তারা যদি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের নীতিমালাগুলো মেনে চলে তবে এ বিষয়ে অগ্রগতি আসবেই।’
এর মধ্যেই বুধবার চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মস্কোয় কোরীয় উপদ্বীপের সংকট সমাধানের বিষয়ে বৈঠক করেন। পরে বেইজিংয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু কাং বলেন, ‘পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে উত্তর কোরিয়ার বর্তমান অগ্রগতি নিয়ে চীন সন্তুষ্ট। আমরা চাই, ওই অঞ্চলে দীর্ঘ মেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। এ-জন্য সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
তবে ৩ দেশের প্রতিনিধির ওই বৈঠকের বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউজ।
উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়া তাদের সঙ্গে কোন প্রকার অর্থনৈতিক প্রকল্প চালু করতে পারবে না।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার এমন পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সিদ্ধান্ত কেবল তখনই বাস্তবায়ন হবে যখন তিনি বলবেন।
তিনি বলেন, তারা(দ. কোরিয়া) আমাদের অনুমোদন ছাড়া কিছুই করবে না। তারা আমাদের অনুমোদন ছাড়া কিছুই করে না।