জেলার দুধকুমর নদীর অব্যাহত ভাঙনে গত এক সপ্তাহে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর, গাছপালা এবং ১৫০ মিটার আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে একটি স্কুল, কমিটিউনিটি ক্লিনিক ও মাদ্রাসা। যেকোনো সময় নদীগর্ভে প্রতিষ্ঠানগুলো বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২ মাস ধরে অব্যাহত ভাঙনে আড়াই শতাধিক বাড়ীঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তাতে কাজ হয়নি। ভাঙন কবলিত গৃহহীন মানুষগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে সরজমিনে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গ্রামটিতে যাওয়ার একমাত্র সেমি বাঁধ রাস্তাটির অধিকাংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। অন্যদিকে তীব্র ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
ভাঙন কবলিতরা তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউবা কাটছে গাছপালা। সেই ফাঁকে উন্মুক্ত আকাশে সকালের খাবার খাচ্ছে কয়েকটি পরিবার। বাঁধ সংলগ্ন বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোয়ালমারী কমিউিনিটি ক্লিনিক ও বোয়ালমারী দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। যেকোনো সময় দুধকুমর নদী গিলে নিতে পারে এই তিন প্রতিষ্ঠানকে।
ওই গ্রামের জহুর আলী, নজরুল ও রোস্তমসহ অনেকে জানান, জায়গা জমি যা ছিল নদীতে চলে গেছে। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই পর্যন্ত নাই।
এই গ্রামের প্রাক্তন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পারুল আক্তার জানান, গত তিনদিনে ৩২টি বাড়ি গৃহহীন হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল ইতোমধ্যে বাড়ি সরিয়েছে নজরুল, জহুর আলী, রোস্তম, আল আমিন, খৈমুদ্দি, এনতাল, শমসের মাস্টার, মহুরন, শাহের আলী, ইসমাঈল, আজগার, এরশাদুল, আশরাফুল, ফরিদুল, আজিজুল, নুর ইসলাম, কাঞ্চা, জাহাঙ্গীর, সফিকুল, ছয়ফুল, শাহারুদ্দি, ছাইফুল, ফুলবর, আমিনুল, আতাউর, রহিমা ও সহিদুল।
এছাড়া ঘর সরিয়ে নিয়েছেন আলী হোসেন, মজিবর, ইসমাঈল, ইছিমুদ্দি ও ফজলে রহমান এলাকাবাসী জানান, করাল গ্রাসী ভাঙনে প্রতিবছর হাজার হাজার পরিবার বসতভিটা, আবাদি জমিন হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে। বিপুল সংখ্যক গৃহহীন পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারছে না কেউ। সরকারিভাবে ঢেউটিন ছাড়া আর কিছইু কপালে জুটছে না তাদের।
ভাঙনে ভূমিহীন পরিবারগুলো অন্যের বাড়িতে কিংবা রাস্তার ধারে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন জানান, সামনে বাৎসরিক সমাপনী পরীক্ষা। স্কুলটি ভেঙে গেলে শিক্ষার্থী নিয়ে চরম বিপদে পড়ে যাব। স্কুল ভবনটি নিলামের জন্য গত ২৬ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে।
নুনখাওয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন ব্যাপারী জানান, আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেন-দরবার করে কিছু জিও ব্যাগ পেয়েছি। কিন্তু তাতে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের কাছে দাবি দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হোক।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, ভাঙনের খবর আমরা পেয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। আশা করছি আমরা সবাই মিলে ভাঙন রোধ করতে সক্ষম হব।