Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশের সাথে সিপা চুক্তি করতে চায় ভারত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:৪৫ PM
আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:৪৫ PM

bdmorning Image Preview
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভু ও বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ


কূটনৈতিক প্রতিবেদক

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি করতে চাচ্ছে ভারত। প্রস্তাবিত চুক্তিটির নাম হবে ‘কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিপা)’।

আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার পাঁচ দিনের সফরে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভু এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এই চুক্তির ফলে পণ্য রপ্তানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনাসহ বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকায় পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আজ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে ভোলা যান তিনি। সেখানে ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর পরিদর্শন করেন। আগামীকাল ২৬ সেপ্টেম্বর দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী বৈঠকে বসবেন। ঐদিনই বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।

আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী এবং একইদিনে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন তিনি। এই সফরে মন্ত্রী সুরেশ প্রভু ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উন্নয়নে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার, বেনাপোল স্থলবন্দর উন্নয়নসহ একাধিক দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলাপ করবেন।

এছাড়া বাণিজ্য এবং বেসরকারি বিমান চলাচল খাতে ঢাকা-নয়াদিল্লির বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতেই ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর এই সফর বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে সিপা চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের টিকফার (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট) আদলে এই চুক্তি করার প্রস্তাব দেয় ভারত। বাংলাদেশের সঙ্গে এ ধরনের অর্থনৈতিক চুক্তির বিষয়ে প্রথমবার গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের দিক থেকে প্রস্তাব আসে। ওই সময় ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠকে সিপা চুক্তির প্রস্তাব দিলে বাংলাদেশ সেই চুক্তির খসড়া চায়। সেই ধারবাহিকতায় এবার সিপা চুক্তি করা হতে পারে।


জানা গেছে, দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়গুলোই সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। মন্ত্রী পর্যায়ের এই বৈঠকে ভারতের দিক থেকে বেনোপোল বন্দরে ট্রাক জট ছাড়াতে ‘ওয়ান টাইম পুস’ চালু করার প্রস্তাব থাকতে পারে। দুই দেশের সীমান্তে নির্মাণাধীন ছয়টি বর্ডার হাটের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হবে। বাংলাদেশের দিক থেকে স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণের তাগিদ দেয়া হবে। যাতে দুই দেশের সীমান্ত বন্দরে একই ধরনের অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করা যায়।

এছাড়া বিএসটিআই অনুমোদিত পণ্য ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্বীকৃতির বিষয়ে প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশের পাট ও হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড জাতীয় পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে তা প্রত্যাহারের বিষয়েও প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ।

জানা গেছে, লাইন অফ ক্রেডিটের আওতায় দেশের অবকাঠামো খাত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চায় ভারত। গত ৮ বছরে প্রথম ও দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিট বা এলওসি চুক্তির আওতায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করা হয়। তৃতীয় এলওসির আওতায় গত বছর আরও সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ভারত থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে। যা দিয়ে দেশের বড় ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি বাড়বে। একই সঙ্গে রপ্তানি বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, ভারতীয় ঋণে দেশের বড় ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এগুলো হচ্ছে-রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ অবকাঠামো উন্নয়ন, পায়রা বন্দরের বহুমুখী টার্মিনাল নির্মাণ, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার ও তীর সংরক্ষণ, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত দ্বৈতগেজ রেলপথ নির্মাণ, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নতকরণ, বেনাপোল-যশোর-ভাটিয়াপাড়া-ভাঙ্গা সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা, চট্টগ্রামে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, ঈশ্বরদীতে কনটেইনার ডিপো নির্মাণ, কাটিহার-পার্বতীপুর-বরনগর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন তৈরি, মংলা বন্দর উন্নয়ন, চট্টগ্রামে ড্রাই ডক নির্মাণ, মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট থেকে রামগড় পর্যন্ত চার লেনে সড়ক উন্নীত করা, মোল্লারাহাটে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে সরাইল পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ১ লাখ এলইডি বাল্ব সরবরাহ প্রকল্প। এছাড়া এলওসি চুক্তির আওতায় ভারতের কাছ থেকে ১ শতাংশ সুদে আগামী ২০ বছরে ঋণের টাকা পরিশোধের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। ফলে বড় অঙ্কের ঋণের এই টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে পাওয়া গেলে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

Bootstrap Image Preview