Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের ২২ দিনে কার কী করণীয়...

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:৪৩ PM
আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:৪৩ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের অংশ হিসেবে মা ইলিশ রক্ষা ও স্বাচ্ছন্দে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে নদনদীতে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আগামী ৭ অক্টোবর থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিনের জন্য দেশের ইলিশ অধ্যুষিত নদনদীতে বন্ধ থাকবে ইলিশ ধরা। নিষেধাজ্ঞা শেষে আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে আবার শুরু হবে ইলিশ ধরা কার্যক্রম।

গতকাল রবিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০১৮ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উক্ত সভায় মৎস্য মন্ত্রণালয় দেশের নদনদীর সাত হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ইলিশের প্রজননক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। ভোলা জেলার মনপুরা ও ঢলচর, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া কালিরচর ও মৌলভীরচরকে ইলিশের বিশেষ প্রজনন এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার শাহের খালী থেকে হাইতকান্দি পয়েন্ট, ভোলার তজুমুদ্দিন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দিন হতে পশ্চিম সৈয়দ আওলিয়া পয়েন্ট, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপালি পয়েন্ট এবং কক্সবাজারের কুতুবদিয়া থেকে গণ্ডামারা পয়েন্ট প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরীয়তপুর, ঢাকা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী,জামালপুর, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গোপালগঞ্জ- এই ৩৭ জেলার সব নদনদীতে এ সময় সব ধরনের মাছধরা বন্ধ থাকবে। গত বছর ২০১৭ সালে দেশের ২৭ জেলায় এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

গত বছর ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এ বছর ৬ দিন পিছিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা জারি করার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র বলেন, ‘আশ্বিনের পূর্ণিমার ওপর নির্ভর করে নিষেধাজ্ঞার তারিখ এ বছর ছয় দিন পিছিয়েছে। এ ছাড়া অন্য সব শর্ত ও করণীয় গত বছরগুলোর মতোই বহাল রয়েছে।’

এ সময় করণীয়:
১. এই ২২ দিন নদী বা সাগরে কোথাও ইলিশ ধরা যাবে না।
২. এই সময় ইলিশ মাছ বিতরণ করা যাবে না।
৩. পাইকারি বা খুচরা প্রক্রিয়ায় ইলিশ বিক্রি করা যাবে না।
৪. এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ইলিশ পরিবহন করা যাবে না।
৫. এই সময় ইলিশ মজুদ করা যাবে না।
৬. কোনও পণ্যের সঙ্গে ইলিশ বিনিময়ও করা যাবে না।
এই সময়—
১. নদীতে র‍্যাব, পুলিশ বা কোস্টগার্ডের অভিযান চলবে।
২. হাটবাজারে অভিযান চলবে, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
৩. শহরের বিপণিবিতানগুলোয় (চেইন শপ) অভিযান পরিচালিত হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র আরও বলেন, ‘ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে এই ২২ দিন নদ-নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। এই সময় মাছের ঘাট, মৎস্য আড়ত, হাট-বাজার, চেইন শপে ব্যাপক অভিযান চালানো হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, নৌপুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং মৎস্য অধিদফতর এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করবে।

খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জানান, অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও জেলেদের জন্য সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা বহাল রয়েছে। এ বছর ২২ দিনই তারা খাদ্য সহায়তা পাবেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোয় পৌঁছেছে। না পৌঁছালেও তা পৌঁছে যাবে।

এসময় জেলেদের করণীয়:

ইলিশ না ধরার নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন এ বছরের ২২ দিন একজন জেলে কোনোভাবেই নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারবেন না। তিনি যদি সরকারি এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ ধরতে যান, তাহলে সে যেকোনও সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মুখোমুখি হবেন। তাতে তার জেল বা জরিমানা এমনকি উভয় দণ্ড হতে পারে।

একজন জেলেকে সব সময় মনে রাখতে হবে, প্রতিবছরই পেশাজীবী জেলেদের তালিকা তৈরি করেন ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা। ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিবছর করা জেলেদের তালিকা সংযোজন-বিয়োজনও করেন। তাই প্রতিবছরই একজন জেলের উচিত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে নিজের নাম মৎস্য অফিসে বা ইউনয়ন পরিষদে সংরক্ষিত জেলে তালিকায় আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া। একজন তালিকাভুক্ত জেলে কবে এবং কোথা থেকে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সরকারের খাদ্য সহায়তা পাবেন বা নেবেন তা নিশ্চিত হয়ে সেখানে গিয়ে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি খাদ্য সহায়তা নিয়ে আসবেন। যদি এ ক্ষেত্রে কোনও জেলে দেখতে পান যে স্থানীয় জেলে তালিকায় তার নাম নেই, সে ক্ষেত্রে দ্রুত বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা এমনকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করে নিজের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জেলেকে মনে রাখতে হবে, তিনি যদি তালিকাভুক্ত জেলে না হন তাহলে তিনি সরকারি খাদ্য সহায়তা পাবেন না।

ক্রেতাদের করণীয়:

এই ২২ দিন একজন ক্রেতা হাটবাজার, আড়ত বা চেইন শপ থেকে কোনোভাবেই ইলিশ কিনতে পারবেন না। এ সময় পুলিশ বা র‍্যাব পৃথক বা যৌথভাবে বাজারগুলোয় অভিযান পরিচালনা করবে। কেউ এই সময় ইলিশ বিক্রি করলে বা কিনলে তা আইনের চোখে অপরাধ বলে গণ্য হবে। এই সময় একজন ক্রেতা ইলিশ সংরক্ষণও করতে পারবেন না। এমনকি খাবার হোটেলগুলোয়ও ইলিশের তরকারি বা মাছ বিক্রি করা যাবে না। এ বিষয়গুলো তদারকির দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। যদি কোনও ক্রেতা সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই ২২ দিনের যেকোনও সময় ইলিশ ক্রয় বা মজুত করে বা মজুত অবস্থায় পাওয়া যায় তাহলে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল বা একলাখ টাকা জরিমানা করতে পারবেন।

আড়তদারদের করণীয়:

নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ২২ দিন দেশের সব ইলিশের আড়ত বন্ধ থাকবে। আড়ত গুলোয় ইলিশের কেনাবেচা বা মজুদ করা বা রাখা যাবে না। কোনও আড়তদার এই সময় ইলিশ কেনাবেচা বা মজুদ করলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ সময় স্থানীয় প্রশাসনের নেতৃত্বে আড়ৎগুলোয় পুলিশ, র্যা বের যৌথ অভিযান এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারবে। এ সময় যদি কোনও আড়তে ইলিশ কেনাবেচা বা মজুদ অবস্থায় পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে আড়তে পাওয়া ইলিশ জব্দ এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার দায়ে আড়ৎদার বিদ্যমান আইনে ছয় মাসের জেল এবং একলাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর করণীয়:

মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন এই ২২ দিন তৎপর থাকতে হবে স্থানীয় উপজেলা ও জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। জেলা বা উপজেলায় কর্মরত সংশ্লিষ্ট মৎস্য কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবেন। এই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক পুরো জেলার জেলেদের তালিকা তৈরি করবেন। এ তালিকা নির্ধারিত নিষেধাজ্ঞার তারিখের আগেই চূড়ান্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সহায়তা নেবেন। এরপর তালিকাভুক্ত জেলেদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া খাদ্য সহায়তা (চাল বা গম) দেবেন। এ সময় একজন জেলে পরিবার সর্বোচ্চ ৩০ কেজি চাল পাবেন। খাদ্য সহায়তা বাবদ চালের পাশাপাশি বা বিকল্প হিসেবে গম দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও এখন সবক্ষেত্রেই চাল সহায়তা দেওয়া হয়। জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি ব্যবস্থাপনা করবেন স্থানীয় চেয়ারম্যান। এ কার্যক্রম তদারকি বা মনিটর করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক। তাদের সহায়তা করবেন স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা।

নিষেধাজ্ঞার এই সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্ব পাওয়া কর্মকর্তা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে নদীতে টহল দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। এ সময় নদনদীতে যাতে কোনও জেলে জাল না ফেলে বা ইলিশ ধরার কাজের সঙ্গে যেন কেউ যুক্ত না থাকে তা নিশ্চিত করতে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, নৌপুলিশ, র্যা ব, বিজিবি, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন যৌথভাবে সরকারের এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করবে। এ সময় জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। আইন বা সরকারি এই নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে জেল জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারবেন।

Bootstrap Image Preview