Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হঠাৎ ইইউর উপর কেন এত খেপেছে ব্রিটিশরা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক-
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৬:১৭ AM
আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৫৬ AM

bdmorning Image Preview


অস্ট্রিয়ার শহর সলসবার্গে অনুষ্ঠিত দুদিনের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হয়েছিল ইইউভুক্ত দেশগুলোর সরকার প্রধানেরা। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ ইইউ থেকে বেরিয়ে যাবে যুক্তরাজ্য। ওই বিচ্ছেদের পর তাদের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্পর্ক কি হবে তা নিয়ে চলছে সমঝোতা। গত প্রায় দুই বছর যাবৎ আলোচনা চালালেও তাঁরা কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।

কিন্তু এই সম্মেলনের পর ব্রেক্সিট সমঝোতায় যুক্তরাজ্যের প্রতি আরও সম্মানজনক আচরণ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন(ইইউ) নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর আকস্মিক ওই বক্তব্যের পর আজ শনিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্টও একই সুরে কথা বললেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ব্রিটিশদের ভদ্রতাকে যেন দুর্বলতা মনে করা না হয়।

২৪ ঘণ্টার মাথায় প্রধানমন্ত্রী মে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ওই ভাষণের আসল উদ্দেশ্য ইইউকে পাল্টা জবাব দেওয়াই।

তিনি ইইউ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ব্রেক্সিট সমঝোতার শুরু থেকেই যুক্তরাজ্য সম্মানজনক আচরণ করে আসছে। যুক্তরাজ্যও তাঁদের কাছ থেকে একই রকম সম্মান আশা করে।

ফলে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি অমন ছবির পোস্ট ব্রিটিশদের গায়ে জ্বালা ধরায়। একে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি চরম অবমাননাকর আচরণ বলে সমালোচনা করা হয়। বিতর্ক চলে থেরেসা মে’র নেতৃত্বের পক্ষে-বিপক্ষেও।

এরপরই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় কণ্ঠে জানিয়ে দেন, ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে তিনি কখনো পুনরায় গণভোটের দাবি মেনে নেবেন না। যুক্তরাজ্যের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তিও তিনি করবেন না। তাঁর দেশ প্রয়োজনে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদে প্রস্তুত এবং সে ক্ষেত্রে নর্দান আয়ারল্যান্ড সীমান্তের শান্তি রক্ষায় সম্ভাব্য সবকিছু করবে।

তিনি ইইউ নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এখনকার আচরণই ইইউ’র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণ করবে।

তিনি বলেন, সমঝোতার এ পর্যায়ে এসে কোনো বিকল্প প্রস্তাব না দিয়ে এবং কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছাড়াই অন্য পক্ষের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা গ্রহণযোগ্য নয়। ইইউর অগ্রহণযোগ্য আচরণের কারণে সমঝোতা থমকে গেছে বলে উল্লেখ করেন মে।

তিনি আরো বলেন, ‘এখন আলোচনা সচল করতে ইইউকেই এগিয়ে আসতে হবে। যুক্তরাজ্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের বিস্তারিত কারণ এবং বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপনের মাধ্যমে সেটি করতে হবে।’

সম্মেলন শেষে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে ইইউ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর তিনি নিজের ইনস্টাগ্রামে থেরেসা মে’র সঙ্গে কেক খাওয়ার একটি ছবি পোস্ট করেন, যাতে লেখা—শুধুই কেক, সম্ভবত? দুঃখিত, কোনো চেরি নেই।

ছবির ওই কথার অনেক গভীর অর্থ আছে। ইইউ শুরু থেকে অভিযোগ করে আসছে— যুক্তরাজ্য ‘চেরি পিকিং’ করছে। অর্থাৎ ইইউর কেবল ভালো ভালো জিনিসগুলো ধরে রাখতে চাইছে যুক্তরাজ্য।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এমন উত্তপ্ত প্রতিক্রিয়ার পর ইইউ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবকে তাঁরা গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মে’র নেতৃত্বকে সব সময়ই সম্মানের চোখে দেখে আসছেন। ছাড়ের মানসিকতা নিয়ে এগোলে নভেম্বরের মধ্যেই একটি সফল চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে তিনি এখনো আশাবাদী। ডোনাল্ড টাস্কের ওই বিবৃতি ব্রিটিশদের মন নরম করতে পারেনি।

শনিবার সকালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, ব্রিটিশদের ভদ্রতাকে ভুল করে যেন দুর্বলতা ভাবা না হয়। তিনি বলেন, ‘তোমরা যদি আমাদের কঠিন পরিস্থিতিতে ফেল, আমরা আমাদের মত করে দাঁড়িয়ে যাব-আমরা ওই ধরনেরই দেশ’।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অসম্মান করে, মানুষকে মিথ্যাবাদী বলে-এই কঠিন পরিস্থিতির সমাধান মিলবে না।

প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র নেতৃত্ব নিয়ে তাঁর নিজ দলেই বেশ সমালোচনা ছিল। কিন্তু শুক্রবারের ভাষণে বলিষ্ঠ অবস্থান তুলে ধরে তিনি বেশ প্রশংসিত হচ্ছেন।

Bootstrap Image Preview