Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

'২০ বছরের কম সময়ের গ্যারান্টিতে সড়ক নির্মাণ হবে না'

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:০৫ AM
আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৩৫ AM

bdmorning Image Preview


পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দেশে ২০ বছরের কম সময়ের গ্যারান্টিতে রাস্তা নির্মাণ করা হবে না। বাংলাদেশে এখন সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২১ হাজার কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর পরিধি আরও বাড়াতে হবে।

আজ রবিবার বেলা ১১ টায় সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি কনফারেন্স রুমে 'বাংলাদেশে মানসম্মত সড়ক অবকাঠামো নির্মাণঃ সমস্যা ও সম্ভাবনা' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, জাতীয় প্রবৃদ্ধির প্রধান উপাদানের একটি হচ্ছে রাস্তার অবকাঠামো নির্মাণ। দেশে যা কিছুই উৎপাদন হয় সেসব পণ্যের বেশির ভাগই সড়ক পথে আনা নেওয়া করা হয়। তাই সড়ক, রেল ও নৌ এই তিন পথকেই সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম উন্নত দেশ হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে আমরা সিঙ্গাপুরকে পিছনে ফেলতে চাই আর ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা এশিয়ার ৪টি অর্থনৈতিক দেশের মধ্যে একটি হতে চাই। আর সে জন্য সড়ক-জনপদ বিভাগকে আরও কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলেন, ১১৮ বছর আগে এই ভূ-খণ্ডে ২৯০ কোটি মানুষ ছিল আজ তা ১৮ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। এই ১৮ কোটি মানুষের সুযোগ-সুবিধাকে প্রধান্য দিয়ে পথ নির্মাণ করতে হবে। রাস্তা ব্যবহারকারীদের চিন্তা-চেতনাটি মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
কারণ যেকোন কাজের সাফল্য লাভ করে সেই কাজের ভুক্তভোগীদের অংশগ্রহণে।

মন্ত্রী বলেন, ২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলা আয়োজন করে আমরা বিশ্বের সর্বোচ্চ দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছি। আর এটি সম্ভব হয়েছিল আমরা এই ইভেন্টে সকলকে সম্পৃক্ত করেছিলাম।

পাঠ্যপুস্তকে রাস্তা পারাপারের বিষয়ে চাপ্টার রাখা সম্পর্কে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে পাঠ্যপুস্তকে রাস্তায় যাতায়াতসহ রাস্তা ব্যবহারের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অধ্যায় রাখতে হবে। দৌড়ে রাস্তা পার হওয়ার চিন্তাটি দূর করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, রাস্তা নির্মাণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। বিটুমিনের প্রধান শত্রু হচ্ছে পানি। আর বাংলাদেশে তো বৃষ্টিপাতে পানি জমে অতএব বিটুমিনের বিকল্প কংক্রিট দিয়ে রাস্তা নির্মাণে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
রাস্তা পারাপারে ওভার পাসের তুলনায় আন্ডারপাস নির্মাণে গুরুত্ব দিতে আহ্বান করেন।

নদীপথকে কাজে লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশ প্রাকৃতিকভাবেই নদী প্রধান দেশ। এটিকে কাজে লাগাতে হবে। কন্টেইনার আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে নৌপথকে ব্যবহার করতে হবে। সে জন্যে যাতে নদীর নাব্যতা ঠিক থাকে সেই লক্ষ্যে ড্রেজিং করার ব্যবস্থাও নিতে হবে।

মন্ত্রী বাংলাদেশিদের কর্ম-দক্ষতা সম্পর্কে বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে মালয়েশিয়া সরকার সে দেশের ১ লাখ ৬৮ হাজার ৮১৭টি কারখানায় জরিপ করে দেখেছে সেখানে ৬২ হাজার ১১০ জন ম্যানেজার (উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা) আমাদের দেশের। তবে আমাদের দেশের শিল্প-কারখানার মালিকরা কেন তাদের দায়িত্ব দিচ্ছেন না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিটুমিনের সড়ক টিকবে না। পানি বিটুমিনের শত্রু। পানির সাথেই আমাদের সবসময় বসবাস। আমাদের ২০ বছর মেয়াদী কংক্রিট সড়ক নির্মাণ করতে হবে। প্রথম ১০ বছর কংক্রিট সড়কে হাতই দিতে হবে না। খরচের বিয়য়ে আসলে হয়তবা প্রথমে দিকে কংক্রিটের রাস্তায় খরচ বেশী পড়তে পারে কিন্তু টেকসই হিসাবে সেই খরচ বিটুমিনের চেয়ে অনেক কম হবে এবং মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসবে। সেসব জায়গায় ওভারপাস বা আন্ডারপাস দরকার যেসব জায়গাতে এগুলো তৈরি করতে হবে।

পরিকল্পনান্ত্রী আরো বলেন, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, এর ভিতর দিয়েই কাজ করতে হবে। সীমাব্ধতাকে উপেক্ষা করে দেশকে নিয়ে যেতে হবে কাঙ্খিত লক্ষ্যে। আলোচনায় উঠে এসেছে আমাদের জনবলের অভাব রয়েছে অর্থাৎ দক্ষ জনবলের অভাব। অন্যান্য দেশের মত আমাদের অবকাঠামোও নেই, ভৌত এবং অভৌত দুটি অবকাঠামোতেই আমাদের দূর্বলতা রয়েছে এগুলোও আরো উন্নয়ন করতে হবে।  

তিনি বলেন, গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সমস্যা সমাধানে প্রথমে করতে হবে একটি সঠিক নকশা-একটি টেকসই নকশা, যেটির বাস্তবায়নে আমাদের রাস্তার সমস্যা সমাধান হবে। প্রয়োজনে একটি সুদূর প্রসারি নকশা তৈরি করতে হবে যেটি এখন থেকে ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন শুরু হবে। যেটি বাস্তবায়নে পরবর্তীতে কোন বাধা সম্মুখীন হতে হবে না। ২০ বছর মেয়াদী রাস্তা নির্মাণ করতে পারে এমন ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হবে। এর ফলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সড়ক গবেশণাগারের মহাপরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন পেইঞ্জ। সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বুয়েটে পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক ও নগরবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।

Bootstrap Image Preview