Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পরকীয়ার ফাঁদে ফেলে প্রবাসী যুবককে পিটিয়ে হত্যা

আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:৫০ AM
আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:৫১ AM

bdmorning Image Preview


প্রবাসী যুবক ফয়সালকে পরকীয়ার ফাঁদে ফেলে দাউদকান্দিতে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৩ জনকে আসামী করে দাউদকান্দি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিহত ফয়সালের পরিবার ৫ জনকে আসামী করে অভিযোগ দিলেও পুলিশ তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে ৩জনের নামে এজাহারিয় কাগজে স্বাক্ষর রাখে।

থানা পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের উলুকান্দি গ্রামের প্রবাসী বাবুল মিয়া সরকারের ছেলে প্রবাসী ফেরত মো. ফয়সালের সাথে পরকিয়া প্রেমের সর্ম্পক হয় একই ইউনিয়নের নাগের চরের মো. সফিক মিয়ার মেয়ে ও উলুকান্দির জয়নাল মিয়ার প্রবাসী ছেলে মো. শিপনের স্ত্রী মোমেনা আক্তার মৌ এর।

এরই জের ধরে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে মোমেনা ফয়সালকে ফোন করে দাউদকান্দির গৌরীপুরে একটি ফ্লাট বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে ফয়সালকে আটকে রেখে মোমেনা তার ভাই রুবেলকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানায়। এরপর রুবেল গ্রাম থেকে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের  সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল হোসেন, নাগেরচর ওয়ার্ড মেম্বার মো. ইউসুফ আলী এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসী মো. মোমেন মিয়াসহ ৭/৮জনকে সাথে নিয়ে যায়।

গৌরীপুরের ওই বাসায় প্রথমে মোমেনাকে বিয়ের জন্য ফয়সালকে চাপ দেওয়া হয়। এতে ফয়সাল রাজি না হওয়ায় তাকে শারিরিক ও মানসিক চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের কিলঘুষিতে ফয়সালের নাক-মুখ থেকে রক্ত অবস্থায় তাকে দাউদকান্দির গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানেও তাকে একের পর এক নির্যাতন করতে থাকলে হাসপাতালে উপস্থিত ভর্তি রোগীর লোকজনদের মধ্যে থেকে আমেলা বেগম নামের একজন গৌরীপুর ফাঁড়ি থানায় ফোন দিলে পুলিশ ফয়সালকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রেরণ করেন এবং ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়।

এদিকে ফয়সালকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

সেখানে পোষ্ট মর্টেমে বিলম্ব হওয়ায় থানায় মামলা করতে পারেনি নিহতের পরিবার। তবে পুলিশের নানা হুমকি পেয়ে শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিহত ফয়সালের মা নাছিমা বেগম, চাচি লায়লা বেগমসহ ৩/৪জন দাউদকান্দি থানায় গিয়ে আবুল মোমেনা আক্তার, রুবেল মিয়া, মামুন মিয়া, ইউসুফ মিয়া ও আবুল হোসেনের নামে মামলার জন্য অভিযোগ করেন। এতে পুলিশ তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে আবুল হোসেন ও ইউসুফ এর নাম বাদ দিয়ে বাকি ৩ জনের নামে মামলার কাগজে স্বাক্ষর রাখেন বলে অভিযোগ করেন।

ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী মোসা. আমেলা বেগম বলেন, কি হয়েছে, সবটা জানি না। ছেলেটাকে ৭/৮জন মিলে মারধর করছে দেখে থানায় ফোন দেই। পরে পুলিশ আসে। যারা মারছে তারা চলে যাচ্ছিলো, পরে লোকজনের সহযোগিতায় তাদেরকে পুলিশের কাছে দেওয়া হয়।

নিহত ফয়সালের মা নাছিমা বেগম বলেন, আমরা ৫ জনের নামে অভিযোগ দেই। পুলিশ প্রথমে ওই কাগজে সই নেয়। পরে আবার ৩ জনের নাম লিখে এনে আমাদেরকে বলে ৫জনের নামে মামলা করলে জিরু পাবেন। এই তিনজনের নামে মামলা করেন। দেখি কি করতে পারি। আমরা মামলা করবো না বলে চলে আসতে চাইলে পুলিশ আমাদের গাল-মন্দ করে জোর করে ওই তিনজনের নামের কাগজেও স্বাক্ষর রাখে।

এবিষয়ে জানতে চেয়ে দাউদকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জের সরকারী মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে ও.সি (তদন্ত) সৈয়দ নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ঘটনার তিনদিন পর ব্যাপক তদন্ত করে ৩জনের নামসহ আরো অজ্ঞাতদের নামে মামলা নেওয়া হয়েছে। বাদী পক্ষের লিখিত অভিযোগের আলোকেই মামলা রুজু করা হয়েছে, এখানে পুলিশের কোন লেখা মামলা হয় নি।

এদিকে বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফয়সাল মারা গেলেও নানা কারণে ময়নাতদন্ত না হওয়ায় গত তিনদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহতের লাশ পরে ছিল। পরে শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়িতে বেলা ৩টায় লাশ এসে পৌছলে পরিবারের স্বজনসহ এলাকায় শুরু হয় শোকের মাতম।

বাবা-মায়ের বিলাপের ধ্বনিতে স্তব্দ হয়ে যায় প্রকৃতি। প্রকৃতি খুনিদের বিচার নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পরে পরিবারের লোকজন। সাড়ে ৩টায় শত শত মানুষের উপস্থিতিতে উলুকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাযা শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সকলের একটাই দাবি ফয়সালের খুনের সাথে জড়িত সকলকে যেন আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশ যদি আসামী পরিবারের সাথে কোন রকম সন্তুষ্ট হয় তাহলে যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন সে দাবিও করেন গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

Bootstrap Image Preview