Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ মঙ্গলবার, মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

একটি ইন্টারভিউ এর জন্ম কথা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৫:০৯ PM
আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:৩৫ PM

bdmorning Image Preview
ভারতীয় যুগশঙ্খ পত্রিকাসহ ১১টি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ নাথ। ছবি: মেরিনা মিতু


১৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টা। কম্পিউটার বন্ধ করে বাসায় যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সবশেষ আবার মেইল চেক করতে মেইল ওপেন করলাম। দেখি নতুন একটি আইডি থেকে মেইল এসেছে 'বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের'। মেইলটি ওপেন করে পড়তে লেগে গেলাম। এক পর্যায়ে দেখি সেখানে ভারতীয় যুগশঙ্খ পত্রিকার প্রধান সম্পাদ বিজয় কৃষ্ণ নাথ মহোদয় বক্তৃতা করেছেন।

প্যাডে নাম্বার ছিল মহাসচিব অ্যাড. গোবিন্দ চন্দ্রের। মহাসচিবকে নিজের পরিচয় দিয়ে জানালাম আমি ভারতীয় সম্পাদক মহোদয়ের একটা ইন্টারভিউ করতে চাই।
তিনি বললেন- সম্পাদক সাহেব আমার পাশেই আছেন আপনি কথা বলুন। মোবাইলটা দিয়ে দিলেন।
সালাম দিলাম। সম্পাদক সাহেবকে কুশলাদী জিজ্ঞাসা করে বললাম আপনার একটা সাক্ষাৎকার চাই।
তিনি বললেন-চলে আসুন এখন।
বললাম আমি ধানমন্ডিতে আছি। এখান থেকে আরকে মিশন রোড যাওয়া অনেক রাত হয়ে যাবে, কালকে কখন সময় পাবেন? তিনি বললেন কাল সকাল ৯টায় ফ্লাইট। আপনি মোবাইলেই নিয়ে নেন, বললেন তিনি।
বললাম ভিডিও নেব। কাল ৭টায় আসি?
তিনি বললেন- আন্তর্জাতিক ফ্লাইট দু'ঘণ্টা আগে উপস্থিত থাকতে হয়।
বললাম তবে সকাল ৭টায় বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবো।
তিনি বললেন আচ্ছা।
প্রশ্নপত্র তৈরি করে বাসায় ফিরলাম রাত ১২টায়।
ক্যামেরাম্যান জুয়েল ও দীপন চন্দ্রকে কল করলে তারা জানালো নিজেদের ব্যস্ততার কথা। রিপোর্টার মেরিনা মিতুকে কল দিলাম। ভাঙা গলা। জিজ্ঞেস করলে জানালো কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
বললাম আগামীকাল ভারতীয় 'যুগশঙ্খ পত্রিকা'র প্রধান সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ নাথ মহোদয়ের একটা সাক্ষাৎকার নিতে চাই তুমি যেতে পারবে?
বললো- পারবো।
বললাম তোমার ক্যামেরাটা নিয়ে নিবে।
সে জানালো ক্যামেরা ক্যান্টনমেন্টে আর আমি মোহাম্মদপুরের মেসে।
বললাম তবে?
বললো সকালে মোহাম্মদপুর বাস স্টেশনে এসে আমাকে নিয়ে যাবেন সেখান
থেকে ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে ক্যামেরা নিয়ে বিমানবন্দরে যাবো।
বললাম ওকে।
ভোর পৌনে ৫টায় মোয়াজ্জিনের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল। প্রস্তুতি নিতে নিতে পৌনে ৬টা। মোহাম্মদপুর স্টেশনে আসতে কয়েকবার মিতুকে কল দিলাম। কিন্তু কেউ কোন কথা বুঝতে পারছি না। মোবাইলে শব্দ আসছে না। ম্যাসেজ দিলাম আমি স্টেশনে। সিএনজি চালকের মোবাইলেও টাকা নেই। মিতুর সাথে কিছুক্ষণ ম্যাসেজ চালাচালির পর এক সাথে ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু। ক্যান্টনমেন্টে যাওয়ার সময় মিতু তার ছোট ভাইয়ের বন্ধুকে ইসিজি মোড়ে ক্যামেরাটা নিয়ে আসতে বললো। ছেলেটি ভোরে ঘুম রেখে ক্যামেরা নিয়ে হাজির। বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ৭টা। মহাসচিব গোবিন্দ সাহেবরা আসতে আসতে সাড়ে ৭টা বাজিয়ে ফেললেন। এর মধ্যে বিমানবন্দরের কিছু দায়িত্বহীনতার ছবি নিতে বললাম মিতুকে।
মহাসচিবকে মোবাইলে জানালাম আমরা নিচে টার্মিনাল-২তে আছি। তাদের গাড়ি সোজা দু'তলায় টার্মিনাল-২তে পৌঁছে গেছে। সেখানে গেলাম। গিয়ে খোঁজছি আমরা। মিতু একজন লোককে দেখে বললেন তিনিই হতে পারেন। আমার কেমন যেন বিদেশি বিদেশি মনে হচ্ছিল। পরে কল দিলে দেখা গেল তিনিই গোবিন্দ।   


যুগশঙ্খ পত্রিকাসহ ১১টি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ নাথ, সাংবাদিক রক্তিম ও আমি। ছবি: মেরিনা মিতু

গোবিন্দ সাহেব সম্পাদক মহোদয়কে দেখিয়ে দিলেন। তিনি স্টিলের রেলিংয়ে বসে আছেন। পাশে দাঁড়িয়ে আছে রক্তিম নামে যুগশঙ্খের সাংবাদিক। গিয়ে হাত মেলালাম। ভদ্রলোক সহজেই গ্রহণ করলেন।
বললাম পৌনে ৮টা বেজে গেছে, চলুন কোন রেস্টুরেন্টে বসে ইন্টারভিউ এর কাজটা শেষ করি। যখন বিমানবন্দরের ভবনে ঢুকতে চাচ্ছি তখন তারা জানালাে প্রতিজনের জন্যে ভিজিট ফি হিসেবে ৩০০টা টাকা করে দিতে হবে। আমরা মানুষ ৫ জন। ৩০০ টাকা করে ১৫০০ টাকা লাগবে। পকেটে ছিলই মাত্র ১৩০০ টাকা। সিএনজি ভাড়া চলে গেছে ৩৩০ টাকা। এই ১০০০ টাকা দিয়ে কিভাবে কি?
পরে টিকিট কাউন্টারে গিয়ে বললাম আপনার রুমে সাক্ষাৎকারটি নেয়া যাবে কিনা? ভদ্রলোক বললেন, শব্দ হবে, আপনাদের কাজ ভালো হবে না। পরে পাশের রুমে গার্ডদের নিয়ন্ত্রণ রুমে সাক্ষাৎকারটি নিতে চাই জানালে ভদ্রলোক জায়গা করে দিলেন।  তার এমন মহৎ কাজের জন্যে ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় বেশ কয়েকবার তার কল আসলে কথা বলতে ছিলেন। ইশারা করায় তিনি নিচু স্বরে কথা বলতেন। এক সময় আমাদের রুমে রেখে তিনি বাহিরে চলে গেলেন। ক্যামেরা কাজ করছে না। বাধ্য হয়ে মোবাইলে সাক্ষাৎকার ধারণ করা হলো। মিতু হাতে ধরে আছেন মোবাইল। ট্রাইপট, লেপেল কিছুই নেই। মেয়েটি বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে মোবাইলে ধারণ করছেন ফুটেজ। প্রায় আধা ঘণ্টা!
সুন্দরভাবে সাক্ষাৎকারটি শেষ হলো।
ইতিমধ্যে ৮টা ২০ বেজে গেছে। রক্তিম ভাই জানালেন তাদের এখনি বর্ডিংপাসের জন্যে ঢুকতে হবে কারণ ৯টায় ফ্লাইট। ৫ নং টার্মিনাল দিয়ে ঢুকতে হবে। কিন্তু সেখানে এই ৮৫ বছরের যুবককে নিয়ে যেতে যেতে অনেক সময় চলে যাবে।
সিকিউরিটিকে বলে ২ নং টার্মিনাল দিয়েই ঢুকলাম। কিন্তু রক্তিম ভাইকে আর খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিভাবে কি করা? এদিকে প্রবীণ সম্পাদককে কোথাও বসিয়ে রেখে খোঁজবো সেই জায়গাও নেই। অর্থাৎ বসার কোন স্থান নেই।
ইমিগ্রেশন সেন্টারও কোন তথ্য দেয় না। যা খুশি বলে দেয়। অবাক ব্যাপার কোন দায়-দায়িত্ব নিতে চায় না।


রক্তিম ভাই টিকিট কিনে অন্যান্য কাজ শেষ করে এলেন। আমাকে বললেন- লাইনে দাঁড়ান। দাঁড়ালাম বেশ সামনে গিয়ে সম্পাদকের সামনে আর ২০ জন লাইনে আছেন। দেখলাম এখন আর কোন সমস্যা নেই। বেরিয়ে পড়লাম। এর মধ্যে কয়েকবার মিতুর সাথে মোবাইলে কথা হলো। অবশ্য কি করে যে মোবাইলটা ভালো হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না।
ভিতরে যখন সম্পাদক মহোদয়কে নিয়ে হাঁটছিলাম তিনি বলতে ছিলেন গতকাল রাতে মাত্র ৩টা ঘণ্টা ঘুমিয়েছি। আমি সাধারণত ৮ঘণ্টা ঘুমায়। তিনি কয়েকবার কথাটি বললেন। বললেন- অনেকেই আসতেছেন তাদের সাথে কথা বলতে হচ্ছে। কারো কারো বাসায় যেতে হচ্ছে। বললাম-মানুষ আপনাকে কাছে পেয়েছে। আবেগ ও শ্রদ্ধায় কষ্টে ফেলে দিয়েছে।

তিনি হাসলেন। বৃদ্ধ মানুষ বয়সের সাথে বিনয়ও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আমাদের সম্পাদকরা নিজের পত্রিকা ছাড়া অন্যকে সময়ই দিতে চাই না। গতবছরের অক্টোবর মাসে একজন সম্পাদকের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্যে কল করেছিলাম তিনি ৬ মাস টাইম পাল্টালেন অবশেষে সাক্ষাৎকারটি আর দিলেন না। আর যুগশঙ্খ পত্রিকার সম্পাদক যিনি ভারতীয় মার্ডক অর্থাৎ ৭টি পত্রিকাসহ মোট ১১টি গণমাধ্যমের প্রধান সম্পাদক তিনি এক কলেই সাক্ষাৎকারটি দিয়ে দিলেন। এখানেই বিনয়ের প্রধান্য, মানুষের প্রকৃত পরিচয়।
মিতুর কাজের পরিধি সম্পর্কে সম্পাদককে যখন জানালাম তিনি খুব খুশি হলেন। বললেন- মেয়েরা খুব যত্ন নিয়ে কাজ করে। তিনি মিতুকে বললেন 'আরিফের সাথে আমার বাড়িতো এসো' অফিসে আসার পর মিতু আমাকে কথাটি জানালেন।
যাবার সময় বললেন-তুমি ভারতে গেলে আমার বাড়িতে আসবে। তোমার সাথে কাজ করতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। এত অল্প সময়ে কেউ সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন তৈরি করে ফেলে আমার কাছে অবাক লাগলো। তুমি কাজ চালিয়ে যাও আশির্বাদ রইল ভালো করবে জীবনে। এসো কিন্তু আমার বাসায়।
আমি মুচকি হাসলাম।
সাক্ষাৎকারটি আগামীকাল ২২ ও ২৪ সেপ্টেম্বর প্রচারিত ও প্রকাশিত হবে।

Bootstrap Image Preview