Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শিক্ষক সংকটে মুরাদনগরের ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান

আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ 
প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৬:৩৩ AM
আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৬:৩৩ AM

bdmorning Image Preview


কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোন সহকারি শিক্ষক। স্কুলটিতে রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষক নিজেই পাঠদানের পাশাপাশি দাফতরিক কাজ চালাচ্ছেন। এত করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তেমনি রয়েছে চুলুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অবস্থা। আবার সেখানে একটি মাত্র ক্লাস রুম নিয়ে চলছে সেখানকার পাঠদান।

মুরাদনগর উপজেলার ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব স্কুলগুলোতে ৭৩টি সহকারি শিক্ষকের পদ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে অর্ধশতটি পদ শূণ্য রয়েছে। বর্তমান সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও মোট জনসংখ্যার শতভাগ প্রাইমারী শিক্ষা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে কাজ করলেও সব দিকে পিছিয়ে রয়েছে। পাঠদানের পাশাপাশি দাফতরিক কাজে বেশি সময় দিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। একটি ক্লাসে শিক্ষক গেলে অন্য ক্লাসগুলো থাকে ফাঁকা। এতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সন্তানদের স্কুলে পাঠালেও ক্লাস না হওয়ায় সামনে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।

মুরাদনগর উপজেলার শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, পূর্ব ঘোড়াশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২জন, চুলুড়িয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কদমতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪টি করে সহকারি শিক্ষকের পদ থাকলেও সবকয়টিই শূণ্য রয়েছে। ভাঙ্গানগর ৪টি সহকারি পদে আছে একজন, কাজিয়াতল দক্ষিণে ৮টি সহকারি পদে আছে ২ জন, কৈজুরী ৭টি সহকারি পদে আছে ২ জন, সাহেবনগরে ৪টি সহকারি পদে আছে ২ জন, নোয়াকান্দিতে ৪টি সহকারি পদে আছে ২ জন, দৌলতপুরে ৪টি সহকারি পদে আছে ২ জন, আন্দিকুটে ৯টি সহকারি পদে আছে ৬ জন, পাহাড়পুরে ৮টি সহকারি পদে আছে ৪ জন, কুরুন্ডিতে ৪টি সহকারি পদে আছে ২ জন, আলীরচর ৪টি সহকারি পদে আছে ৩ জন, লক্ষীপুরে ৪টি সহকারি পদে আছে ৩ জন ও নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫টি সহকারি পদের মধ্যে রয়েছে ৪ জন শিক্ষক রয়েছে। 

কদমতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক অফিস কক্ষে বসে দাফতরিক কাজ করছেন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা লেখা-পড়া না করে মাঠে খেলাধূলা করছে।

ছাত্রছাত্রী অভিভাবকদের অভিযোগ, বিদ্যালয় গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকট থাকলেও শিক্ষা অফিস কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। শিক্ষক সংকটের কারণে অনেক অর্থবান অভিভাবক তাদের সন্তানদের উপজেলা সদরে নিয়েও পড়া লেখা করাচ্ছেন। অপরদিকে নিম্নশ্রেণির অভিভাকরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে কাজে পাঠাচ্ছে।

এসময়, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুজাহিদুল হাসান ও আলী নূর আক্তার বলেন, তাদের বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছাড়া আর কোন শিক্ষক নেই। তিনি অফিস কাজ থেকে শুরু করে সকল শ্রেণির সকল পাঠদান কাজ করতে হয়। তাই এটি শুধু নামে মাত্র স্কুল। স্কুলটি পরিচালনা করতে যেমন প্রধান শিক্ষকের হিমশিমে পরতে হচ্ছে তেমনি শিক্ষার্থীদের কোন লেখাপড়া হচ্ছে না।

কদমতলি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয় বিহীন এলাকায় বিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্পে এ বিদ্যালটি স্থাপন করা হয়। কিন্তু শিক্ষক না থাকার কারণে যে উদ্দেশে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়েছে তার কিছুই হচ্ছে না। প্রায় সময় দাফতরিক কাজে আমাকে উপজেলা সদরে সময় দিতে হয়। তখন বিদ্যালয়টি অভিভাবকহীন হয়ে থাকে। এতে করে শিক্ষার্থীদের কোন শিক্ষাও দেওয়া যাচ্ছে না। অভিভাবকরাও প্রতিদিনেই শিক্ষক আনার জন্য আমাকে চাপ দিচ্ছে।

কৈজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিদ্যালয়টিতে ৫২৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শ্রেণিকক্ষে পড়াতে অন্তত ১০ জন শিক্ষক প্রয়োজন হলেও আছেন মাত্র দুই জন। বিদ্যালয়ের দাফতরিক কাজে আমি যখন ব্যস্ত থাকি ওই সময় দুইজন শিক্ষককে একসঙ্গে তিনটি শ্রেণিতে পড়াতে হয়। 

ভাঙ্গানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী প্রায় দুই'শ। দুইজন সহকারি শিক্ষক থাকলেও বর্তমানে এক জন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

মুগশাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বশির আহমেদ ও সহ সভাপতি মোঃ খাইরুল ইসলাম মিনজাহ জানান, মুগশাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪জন শিক্ষিকা রয়েছে। মুগশাইর গ্রামের শিক্ষিকা হওয়ায় দুপুরে লাঞ্চে গেলে তারা আর স্কুলে আসেন না। সকালে স্কুলে দেরী করে স্কুলে আসেন বলে তারা অভিযোগ করেন।

এব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গাজীউল হক চৌধুরী বলেন, উপজেলা সদর থেকে তুলনামূলক দুর্গম এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় কোনো শিক্ষকই এখানে বেশি দিন থাকেন না। অপরদিকে প্রধান শিক্ষকদের মাসিক সভা, প্রতিবেদন তৈরি ও দাফতরিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সহকারী শিক্ষকেরা পড়ান। প্রধান শিক্ষক না থাকা বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষকেরা এ দায়িত্ব পালন করেন। ফলে তাঁদের একসঙ্গে পাঠদান ও দাফতরিক কাজ ছাড়াও বিভিন্ন সভায় যোগ দিতে হয়। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।

এব্যাপারে মুরাদনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ওই বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের বিপরীতে শিক্ষকের চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করি অল্প দিনের মধ্যেই বিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই বিদ্যালয়গুলো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করব।

Bootstrap Image Preview