জরুরি বিভাগের টিকিট বিক্রির অর্থ ৫৯ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক ও বর্তমান ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে দুদক।
দুদকের অনুমোদন করা মামলার আসামীরা হলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনচার্জ জরুরি বিভাগ থেকে বরখাস্ত এবং বর্তমানে-প্রশাসনিক সংযুক্তিতে কর্মরত মোঃ আজিজুল হক ভুইয়া, সাবেক এমএলএসএস এবং বর্তমানে ক্যাশিয়ার হিসেবে কর্মরত মোঃ আলমগীর হোসেন, সাবেক এমএলএসএস এবং বর্তমানে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটার হিসেবে কর্মরত মোঃ আঃ বাতেন সরকার, জরুরি বিভাগের সাবেক অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক ও ক্যাশিয়ার এবং বর্তমানে ব্লাড ব্যাংক শাখার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত মোঃ শাহজাহান, সাবেক এমএলএসএস এবং বর্তমানে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ আবু হানিফ ভুইয়া ও জরুরী বিভাগের সাবেক অফিস সহকারী এবং বর্তমানে ফর্ম শাখায় কর্মরত মোঃ হারুনর রশিদ।
আজ মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক) জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদনের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ৪০৯/২০১ ধারায় এই মামলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট বিক্রির ৫৯ লাখ ১০ হাজার ৬শত ১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অনুসন্ধান করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপসহকারী পরিচালক মোঃ নূরুল ইসলাম।
অনুসন্ধানকালে দেখা যায় মোঃ আজিজুল হক ভুইয়া ঢাকা জরুরি বিভাগ হতে টিকিট গ্রহণ করেছেন মোট ৮ লাখ ৩৮ হাজার,৬৬৮টি। গ্রহণ করা টিকিট হতে ৮১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৮৫ টাকার টিকিট বিক্রি করেছেন তিনি। কিন্তু তিনি বিক্রি করা টিকিটের টাকা থেকে ৬৬ লাখ ১৫ হাজার ৯৩০ টাকা সরকারি খাতে জমা দিয়েছেন। অবশিষ্ট ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৫ টাকা তিনি জমা দেননি। অপরদিকে তিনি জরুরী বিভাগে রোগী ভর্তি করে আদায় করেছেন ৩৮ লাখ ৩৮ হাজার ২২৭ টাকা। কিন্তু সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছেন ২৩ লাখ ৪৭ হাজার ২৮১ টাকা। এক্ষেত্রে তিনি ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৯৪৬ টাকা কম জমা প্রদান করেছেন। এছাড়া তিনি টিকিট গ্রহণ ও রোগীদের মাঝে বিক্রির দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে টিকিট বিক্রিত টাকা জমা রেজিষ্টারসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র বিনষ্ট করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। অর্থাৎ তিনি রোগী ভর্তি বাবদ এবং টিকিট বিক্রি বাবদ ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৬০১ টাকা কম জমা প্রদান করে আত্মসাত এবং সংশ্লিষ্ট আলামত বিনষ্ট করায় একটি মামলা রুজুর অনুমোদন দিয়েছে দুদক।
মামলার আরেক আসামী মোঃ শাহজাহানের বিষয়ে বলা হয়েছে, হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গত ২০০৯-২০১০ সাল পর্যন্ত ১৫ হাজার টিকিট রোগীদের মাঝে বিক্রি করেছেন। কিন্তু প্রতিটি টিকিটের মূল্য ১০ টাকা হিসেবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা তিনি কোন খাতে জমা প্রদান করেছে তার কোন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি জরুরি বিভাগের কর্মরত থেকে টিকিট গ্রহণ ও রোগীদের মাঝে বিক্রির দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে সংশ্লিষ্ট টিকিট বিক্রির টাকা জমা রেজিষ্টারসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র বিনষ্ট করে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। টিকিট বিক্রির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে দুদক।
মামলার আসামী মোঃ আবু হানিফ ভুইয়া সর্ম্পকে বলা হয়েছে, জরুরী বিভাগে ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালনকালে গত ২০০৯-২০১০ সাল পর্যন্ত ২৮ হাজার টিকিট রোগীদের মাঝে বিক্রি করেছেন। ১০ টাকা টিকিট হিসেবে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা তিনি কোন খাতে জমা প্রদান করেছেন তার কোন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি জরুরী বিভাগের কর্মরত থেকে টিকিট গ্রহণ ও রোগীদের মাঝে বিক্রির দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে সংশ্লিষ্ট টিকিট বিক্রির টাকা জমা না দিয়ে এবং রেজিষ্টারসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র বিনষ্ট করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাকা আত্মসাত করায় একটি মামলা দায়েরে অনুমোদন দিয়েছে দুদক।
অন্য আসামী মোঃ হারুনর রশিদের বিষয়ে বলা হয়েছে, জরুরী বিভাগে ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গত ২০০৯-২০১০ হতে ২০১২-১৩ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার টিকিট রোগীদের মাঝে বিক্রি করেছেন তিনি।কিন্তু টিকিট বিক্রি করে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা তিনি কোন খাতে জমা প্রদান করেছেন তার কোন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। টাকা জমা না দিয়ে অন্যান্য রেকর্ডপত্র বিনষ্ট করে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে দুদক।
মামলার পঞ্চম আসামী মোঃ আলমগীর হোসেনের বিষয়ে বলা হয়েছে, জরুরি বিভাগে ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গত ২০১০-২০১২ সাল পর্যন্ত ২৮ হাজার টিকিট রোগীদের মাঝে বিক্রি করেছেন। কিন্তু টিকিট বিক্রির ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা তিনি কোথায় জমা দিয়েছেন তার কোন তথ্যপ্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে মামলার অনুমতি দিয়েছে দুদক।
মামলার আরেক আসামী বাতেন সরকারের বিষয়ে বলা হয়েছে, জরুরী বিভাগে ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গত ২০০৯-২০১০ সাল পর্যন্ত ১ লাখ টিকিট রোগীদের মাঝে বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু টিকিট বিক্রির ১০ লাখ টাকা(প্রতি টিকিট ১০ টাকা) তিনি কোন খাতে জমা দিয়েছেন তার কোন তথ্য প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি। এ কারণে তার বিরুদ্ধেও মামলার অনুমতি দিয়েছে দুদক।