পদ্মার ভাঙনে নিঃস্ব শরীয়তপুরের নড়িয়াবাসীর পাশে কোনো মন্ত্রীই না দাড়ানোয় ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সর্বস্ব হারানো মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ালে, তারা মানসিকভাবে শক্তি পেতো। যখন এটা হলো না তখন তা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ছাড়াও সরকারের দায়িত্বশীল সিনিয়র মন্ত্রীদের ভর্ৎসনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক মন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা নদীর এই ভয়াবহ ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। সর্বস্ব হারিয়েছেন। এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাৎক্ষণিক হয়তো মানুষের এক্ষেত্রে তেমন কিছুই করার নেই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রী সময়মতো সেখানে যাননি। কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেননি।
বৈঠকে নড়িয়ায় কোনো প্রকল্প নেই জানানো হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প তো মানুষের জন্য। যেখানে মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস হচ্ছে, আস্ত আস্ত দালানকোঠা, বাজার, নগর নদীর বুকে হারিয়ে যাচ্ছে, মানুষ বিলাপ করছে, মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, মানুষের খাবার জুটছে না, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ভেসে যাচ্ছে; তখন প্রকল্প তো পরের কথা। আগে তো অসহায় মানুষের কাছে ছুটে যেতে হবে। তাদের বুকে জড়িয়ে ধরতে হবে। আশা দেখাতে হবে। পাশে দাড়াঁতে হবে।
ভাঙন ঠেকাতে শেখ হাসিনা কার্যকর ভূমিকা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানিয়েছে দায়িত্বশীল সূত্র।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসে পদ্মা নদীর বুকে সবকিছু হারিয়ে নড়িয়া উপজেলায় পাঁচ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে৷ নদী গর্ভে চলে গেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি৷
অনেকেই নিজেদের তিল তিল করে জমানো সম্পদটা পর্যন্ত নিরাপদে সরিয়ে আনতে পারেনি। আকস্মিক ভাঙনে সব কিছুই গিলে নিয়েছে পদ্মা। অনেকেই নিজের বসত ভিটা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন দূরে কোথাও। গাছগাছালি, গবাদী পশু থেকে শুরু করে যতটুকু নেয়া যায়। সেটা নিয়ে অনিশ্চিত গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন। বসতভিটা হারানো এই মানুষগুলোর বুক ফাঁটা কান্না যেন শুনতে পাচ্ছে না পদ্মা। নদীগর্ভে সব কিছু হারিয়ে দূর থেকে প্রমত্তা পদ্মার দিকে তাকিয়ে বিলাপ করছেন এসব মানুষ। অনেকে হারানো জায়গা-জমি ফিরে না পাওয়ার ব্যকুলতায় পদ্মার দিকে তাকিয়ে আছে।
স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, গত কয়েক মাসে নড়িয়াসহ পাঁচটি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেন সার্ভিসেসের হিসেবে, গত সাত বছরে নড়িয়ার প্রায় ১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীতে ডুবে গেছে। এর মধ্যে গত জুলাই থেকে ভেঙেছে প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা।
বিলাসবহুল বাড়ি থেকে শুরু করে মসজিদ মাদ্রাসা সবকিছুই যেন এখন গিলে খাচ্ছে পদ্মা। পদ্মার বুকে টেনে নিয়ে গেছে নড়ীয়ার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
প্রকৃতির অসহায়ত্বের কারণে চেয়ে দেখা ছাড়া সেখানকার অসহায় মানুষদের কিছুই করার নেই। কাল যিনি ছিলেন স্বচ্ছল, আজ তিনি আশ্রয়হীন। তাঁদের সন্তানদের লেখাপড়াসহ ভবিষ্যতের সব সম্ভাবনা পদ্মায় তলিয়ে গেছে।
নড়িয়া পৌরসভা, বাঁশতলা , সাধুর বাজার, ওয়াপদা, মুলফতগঞ্জ, কেদারপুরসহ জেলার অনেক এলাকায় একের পর গ্রাম নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। আর অসহায়-গৃহহীন মানুষের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। প্রতিদিনিই এক ভাঙন আতঙ্কের জনপদে পরিণত হচ্ছে নড়িয়া।