Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

তাদের বুক ফাঁটা কান্না কী কেউ শুনতে পায়?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৪২ AM
আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৬:৩৪ AM

bdmorning Image Preview
ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল


‘একুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে এই তো নদীর খেলা। সকাল বেলার আমির রে ভাই ফকির সন্ধ্যাবেলা। সেই নদীর ধারে কোন ভরসায় বাঁধলি বাসা সুখের আশায়। যখন ধরল ভাঙন পেলিনে তুই পারে যাবার ভেলা।’ শিল্পী মৃণাল কান্তি ঘোষের গানে উঠে এসেছিল প্রমত্তা নদীর চিরায়ত রূপ।

ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল

নদীর ভাঙা গড়ায় যাদের জীবন-জীবিকা তাদের জন্য পদ্মা তাই ভব-নদীর খেলার মতো। সকালবেলা যার সব ছিল সন্ধ্যা বেলায় সবকিছু হারিয়ে তিনি এখন নি:স্ব। চোখের সামনে নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে দেখেছেন তিল তিল করে গড়ে তোলা ভিটে-মাটি, আবাদী জমি। প্রলয়ংকরী পদ্মার দিকে শুধু তাকিয়ে দেখতে হয়েছে তার ভয়ঙ্কর রূপ।

ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল

পদ্মার এমন ভয়ঙ্কর রূপের শিকার হচ্ছে শরীয়তপুরের নড়িয়া অঞ্চলের পদ্মার পাড়ের কয়েকশ পরিবার। পদ্মার আকস্মিক গতিপথ পরিবর্তনের ফলে প্রবল ভাঙন শুরু হয়েছে। একের পর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, আবাদি জমি, বাজার, হাসপাতাল, সরকারি স্থাপনাসহ সবকিছু।

ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল

নিজেদের আবাসস্থল হারিয়ে তাদের অনেকে এখন খোলা আকাশের নিচে আবার অনেকে দূরে কোথাও আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল

গত কয়েক মাসে পদ্মা নদীর বুকে সবকিছু হারিয়ে নড়িয়া উপজেলায় পাঁচ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে৷ নদী গর্ভে চলে গেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি৷

অনেকেই নিজেদের তিল তিল করে জমানো সম্পদটা পর্যন্ত নিরাপদে সরিয়ে আনতে পারেনি। আকস্মিক ভাঙনে সব কিছুই গিলে নিয়েছে পদ্মা। অনেকেই নিজের বসত ভিটা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন দূরে কোথাও। গাছগাছালি, গবাদী পশু থেকে শুরু করে যতটুকু নেয়া যায়। সেটা নিয়ে অনিশ্চিত গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন।

ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল

বসতভিটা হারানো এই মানুষগুলোর বুক ফাঁটা কান্না যেন শুনতে পায় না পদ্মা। নদীগর্ভে সব কিছু হারিয়ে দূর থেকে প্রমত্তা পদ্মার দিকে তাকিয়ে বিলাপ করছেন এসব মানুষ। অনেকে হারানো জায়গা-জমি ফিরে না পাওয়ার ব্যকুলতায় পদ্মার দিকে তাকিয়ে আছে।

স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যমতে, গত কয়েক মাসে নড়িয়াসহ পাঁচটি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।

ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল

পানি উন্নয়ন বোর্ডের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেন সার্ভিসেসের হিসেবে, গত সাত বছরে নড়িয়ার প্রায় ১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীতে ডুবে গেছে। এর মধ্যে গত জুলাই থেকে ভেঙেছে প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা।

বিলাসবহুল বাড়ি থেকে শুরু করে মসজিদ মাদ্রাসা সবকিছুই যেন এখন গিলে খাচ্ছে পদ্মা। পদ্মার বুকে টেনে নিয়ে গেছে নড়ীয়ার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

ছবি: আবু সুফিয়ান জুয়েল

প্রকৃতির খামখেলালীপনার কারণে চেয়ে দেখা ছাড়া সেখানকার অসহায় মানুষদের কিছুই করার নেই। কাল যিনি ছিলেন স্বচ্ছল, আজ তিনি আশ্রয়হীন। তাদের সন্তানদের লেখাপড়াসহ ভবিষ্যতের সব সম্ভাবনা পদ্মায় তলিয়ে গেছে।

নড়িয়া পৌরসভা, বাঁশতলা , সাধুর বাজার, ওয়াপদা, মুলফতগঞ্জ, কেদারপুরসহ জেলার অনেক এলাকায় একের পর গ্রাম নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। আর অসহায়-গৃহহীন মানুষের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। প্রতিদিনিই এক ভাঙন আতঙ্কের জনপদে পরিণত হচ্ছে নড়িয়া।

Bootstrap Image Preview