Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘আমার দুই সন্তান রয়েছে, বিয়ে করতে হলে তোমার ভাইকে মেরে ফেলতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:৫৫ PM
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:০১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


দেবর আজমল হক মিন্টু ও ভাবি কাজল রেখার মধ্যে মধ্যে ৮ বছরের অনৈতিক সম্পর্ক। সম্পর্কের একপর্যায় তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। দেবর (মিন্টু) তার ভাবিকে (কাজল) এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। তখন ভাবি দেবরকে জানায়, আমার দুই সন্তান রয়েছে, বিয়ে করতে হলে তোমার ভাইকে মেরে ফেলতে হবে। দেবরকে বিয়ে করতে স্বামীকে এভাবেই হত্যার পরিকল্পনা করেন গৃহবধূ কাজল রেখা। ভাবির কথা শুনে বড় ভাই মনিরুজ্জামানকে হত্যা করতে তিন ভাড়াটে খুনির সঙ্গে ১ লাখ টাকার চুক্তি করেন ছোট ভাই মিন্টু।

রাজধানীর বাড্ডায় উদ্ধারকৃত লাশের বিষয়েপুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব লোমহর্ষক তথ্য।

গত ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার দিকে বাড্ডা থানাধীন সাতারকুলের মেরুল হিন্দুপাড়ার রাম মঙ্গলের বাড়ির পাশে খোলা মাঠে গলা ও পেটে ছুরিকাঘাত করা একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নিহতের ছোট ভাই আজমল হক মিন্টু লাশের পরিচয় শনাক্ত করেন। নিহতের নাম মনিরুজ্জামান মনির। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই মিন্টু বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, এটিকে ছিনতাইয়ের ঘটনা সাজাতে ভাইয়ের সঙ্গে থাকা ২০ হাজার টাকা খোয়া যাওয়ার কথা পুলিশকে জানান মিন্টু।

এরপর ক্লুলেস এ মামলার তদন্তে নেমে নিহতের স্ত্রী কাজলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা এবং নিজে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।

শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানের উপপুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিসি মোস্তাক।

তিনি বলেন, ছোট ভাই ও স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের কারণে মনিরকে হত্যা করা হয়েছে।

শুক্রবার আদালতে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন কাজল।

জিজ্ঞাসাবাদে দেয়া তথ্য এবং জবানবন্দির ভিত্তিতে এদিন রাতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছোট ভাই আজমল হক মিন্টুসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে বাড্ডা থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন- পেশাদার কিলার আব্দুল মান্নান, সোহাগ ওরফে শাওন ও ফাহিম।

তিনি বলেন, নিহত মনির ফেনীতে কাজ করতেন। তবে তার পরিবার থাকত গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে। সম্প্রতি তিনি বাড়িতে যান। তখনই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে তার স্ত্রী কাজল ও ছোট ভাই মিন্টু।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, বড় ভাই মনিরকে ফোন দিয়ে জানায়- আমি বিয়ে করব, ঢাকায় মেয়ে দেখেছি, তুমি এসে দেখে যাও। মনির রাজি হচ্ছিলেন না। পরে স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের বারবার অনুরোধে মনির ঢাকায় আসেন।

গাবতলী নেমে ছোট ভাইকে ফোন দেন মনির। তখন ছোট ভাই মান্নানের নম্বর দিয়ে মনিরকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে এবং সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসবে বলে জানায়। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী বাড্ডা সাতারকুলের নির্জন ওই স্থানে নিয়ে যায়।

এ সময় তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিল ভারাটে খুনি শাওন ও ফাহিম। তাদের হাতে ছুরি ছিল। এই ছুরি দিয়ে মনিরের গলায় প্রথমে ফাহিম, এরপর মান্নান আরও একটি আঘাত করলে মনির মাটিতে পড়ে যায়। তখন তারা আলোচনা করে যে, আমরা আঘাত করেছি, শাওন তো কিছু করেনি, তাকে কিছু একটা করতে হবে। তখন শাওন ছুরি দিয়ে তার পেটে উপর্যুপরি আঘাত করে। এতে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে তিন ভাড়াতে খুনি। এরপর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি মিন্টুকে জানায় মান্নান। এরপর মিন্টু বিষয়টি তার ভাবি কাজল রেখাকে জানায়।

ডিসি মোস্তাক আরও জানান, তিন ভাড়াটে খুনি থাকত কড়াইল বস্তিতে। তাদের ৩০ হাজার টাকা দেয়া হয় বাকি ৭০ হাজার টাকা পরে দেবে বলে জানায় আসামিরা। বাকি টাকা পরিশোধের আগেই সবাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিসি মোস্তাক আহমেদ জানান, কিলিং মিশন শেষে চুক্তির অগ্রিম পাওয়া ৩০ হাজার টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয় খুনিরা। এই টাকার মধ্য থেকে মান্নান নেয় ১০ হাজার টাকা, ফাহিমকে দেয়া হয় ৫ হাজার টাকা এবং বাকি ১৫ হাজার টাকা নেয় শাওন।

Bootstrap Image Preview