Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় আস্থা হারাচ্ছে রোগীরা, ঝুঁকছে সরকারি হাসপাতালে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৪৫ AM
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৪৫ AM

bdmorning Image Preview
চমেক'এ রোগীদের ভিড়


বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রাম নগরে নিয়ম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাঙের ছাড়ার মতো গড়ে ওঠা বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে ভূল চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে প্রতিনিয়ত। গত কয়েকমাসে একের পর এক ভুল চিকিৎসা এবং অবহেলায় শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেকে। বর্তমানে ক্লিনিকে দু’জন মৃত্যূর সঙ্গে লড়াই করে চলছেন। ফলে রোগীরা ব্যয়বহুল বেসরকারি হাসপাতালের উপর আস্থা হারিয়ে এখন সরকারি হাসপাতালের দিকে ঝুঁকছে ।

গত বুধবার বিকেলে নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মো. সাকের (৪০) নামে একজনের মৃত্যূর অভিযোগ করেন স্বজনরা। সে মাথাব্যথা নিয়ে ৮ সেপ্টেম্বর ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

সাকেরের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাকের ৮ সেপ্টেম্বর মাথাব্যথা নিয় ভর্তি হন পার্কভিউ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে তাকে শুধু ঘুমের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো ওষুধও দেয়নি। ঘুমের ওষুধের কারণে তার মৃত্যূ হয়।

পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালি উদ্দিন আকবর বলেন, পার্কভিউ হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যূর ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্বজনরা চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যূ হয়েছে বলে অভিযোগ করলেও এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে জানতে পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এটিএম রেজাউল করিম দাবি করেন সাকেরের মৃত্যূর ঘটনায় চিকিৎসকের কোনো অবহেলা কিংবা গাফেলতি নেই।

এর আগে ২৯ জুন সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার রুবেল খানের আড়াই বছর বয়সী মেয়ে রাদিফা খান রাইফা ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। মৃত্যূর পর তার পরিবার ও সাংবাদিকরা ভুল চিকিৎসায় রাইফার মৃত্যূ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

পরে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চিকিৎসকদের অবহেলায় শিশু রাইফার মৃত্যূ হয়েছে বলে উঠে আসে। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় মামলাও করেন রুবেল খান। পরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

গত ১৪ জুন হাটহাজারী পৌরসভার আলিফ হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যূ হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল আলম শাহীন সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছিলেন।

এর আগে মে মাসে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ফরটিস ইনস্টিটিউটেও ভুল চিকিৎসায় একজনের মৃত্যর অভিযোগ ওঠে। তা ছাড়া ৪ সেপ্টেম্বর পিপলস হাসপাতালে আবু তালেব লিটন ও ৩০ জুন ম্যাক্স হাসপাতালে পুলিশের একজন নায়েক জাহাঙ্গীর ভুল অপারেশনের শিকার হন।

এ ছাড়া নগরীর বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে নবজাত সন্তান প্রসবের পর লুকিয়ে ও বদলে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি কারো পুরুষ সন্তান হলে তা লুকিয়ে মেয়ে সন্তান হাতে দেওয়া হয়েছে। আবার জীবিত বাচ্চা প্রসবের পর তা লুকিয়ে রেখে মরা শিশু মার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ- অনেক কাল টাকার মালিক রাতারাতি ক্লিনিক খুলে সেখানে বিষেজ্ঞ ডাক্তাদের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে চমকদার বিজ্ঞাপন দিলে ও ভিতরে অন্য রকম। নেই কোন ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এতে নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে একের পর এক ঘটে চলেছে ন্যাক্কারজনক ঘটনা। যার কারণে রোগী ও স্বজনরা এখন বেসরকারি হাসপাতালের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা ঝুকছে সরকারি হাসপাতালের দিকে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে- সবকটি ওয়ার্ডে রোগীদের তিল ধারনের ঠাই নেই। আসনের বাইরে বহু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। বিশেষ করে মেডিসিন, শিশু ও হার্ড সহ কয়েকটি ওয়ার্ডের বাইরে এ দৃশ্য এখন প্রতিনিয়িত। দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি ওর্য়াডে রোগীদের প্রচণ্ড ভীড়। তারা আসন না পেয়ে ফ্লেরে চিকিৎসা নিচ্ছে। এমনকি সিড়িতে পর্যন্ত অবস্থান করছে।

হাসপাতালের ১২নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা বাকলিয়ার মাহবুবুল আলম জানান, আমার বাবাকে ককেদিন আগে নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভতি করিয়েছিলাম। কিন্ত সেখানে কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং ভাল চিকিৎস না পেয়ে চমেক হাস পাতালে নিয়ে আসি। তিনি বলেন- এখানে আসন পাওয়া না গেলে ও ফ্লোরে ভাল চিকিৎসা পাচ্ছি।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৩২০ শয্যার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে এটিতে বিভিন্ন বিভাগ মিলে ওয়ার্ড রয়েছে ৪৭টি। প্রতিদিন রোগী ভর্তি হয় আড়াই থেকে তিন হাজার। যার কারণে হাসপাতাল কতৃপক্ষ রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে প্রতিনিয়ত হিমশিম হাচ্ছে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দীক বলেন, সরকারি নীতিমালার আলোকে যাদের সব যোগ্যতা বিদ্যামান রয়েছে তাদেরকেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যারা নিয়মনীতি ও শর্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তা ছাড়া প্রায় সময়ই ভ্যাম্যামণ আদালত পরিচালিত হয়ে থাকে।

Bootstrap Image Preview