Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

আরএমজি সেক্টরে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে বিইউএফটি অগ্রগামী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০১৮, ০৭:৪৩ PM
আপডেট: ১২ আগস্ট ২০১৮, ০২:০০ PM

bdmorning Image Preview


আব্দুল্লাহ আল নোমান (অন্তর), বিইউএফটি প্রতিনিধি-

আশি শতকের প্রথম দিকে বাংলাদেশে গার্মেন্টসের উত্থান হয় খুব ছোট ও স্বল্প পরিসরে। তখন হয়ত কেউ কল্পনা করতে পারেনি এই খাতটি একদিন রপ্তানির শীর্ষস্থান দখলে সক্ষম হবে। শুধুমাত্র বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন নয় এটি প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে যার অধিকাংশই নারী।

 

এছাড়াও খাতটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্যান্য খাত যেমন ব্যাংক, ইন্সুরেন্স কোম্পানি, ট্রান্সপোর্টেশন কোম্পানি, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের সাথে জড়িয়ে আছে

কিন্তু এ খাতে বিদেশিকর্মীদের মাধ্যমে দেশ থেকে প্রায় কয়েকশত কোটি মার্কিন ডলার চলে যাচ্ছে দেশের বাহিরে। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই যায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার এছাড়াও রয়েছে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ফিলিপিন, কোরিয়া, চীন থেকে আসা কর্মীরা।

এ খাতে ঘাটতি রয়েছে উপর থেকে মধ্য পর্যায়ের প্রফেশনালদের। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত হয়ে এসে এ খাতে মুখ থুবড়ে পরছে কর্মীরা। দেশের প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ পোশাক কারখানায় বিদেশিকর্মীরা কর্মরত রয়েছে। যার উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে বলা যায় পেশাগত দক্ষতা, ভাষাগত দক্ষতা ছাড়াও আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দক্ষতার অভাবে এই অর্থ তুলে দিতে হয় বিদেশিদের হাতে যা দিন দিন পোশাক খাতের আগামীদিনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগামীদিনের প্রতিভাবান তরুণদের এই খাতের প্রতি উৎসাহ প্রদান ও কর্মদক্ষ নেতৃত্ব তৈরির মাধ্যমে বিদেশি দক্ষ জনবলের দৌরাত্ম্য কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা রক্ষা করে পোশাক খাতকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছানো লক্ষ্যে বিজিএমইএ ইউনিভারসিটি অফ ফ্যাশন এন্ড টেকলজি ১৪ মার্চ ২০১২ তে যাত্রা শুরু করে।

শুধু তাই নয় বাংলাদেশ গার্মেন্টস মেনুফ্যাকচারিং এক্সপোর্টাস এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এর ২০২১ সালের ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রায় বিজিএমইএ ইউনিভারসিটি অফ ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি) কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শুরুর দিক থেকেই বোর্ড অব ট্রাস্টি তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস তৈরিতে গুরুত্বারোপ করে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষ্যে ৩ বিঘা জমির উপর নিজস্ব ক্যাম্পাস থাকবে। বিইউএফটি সেখানে মাত্র ৫ বছরে তুরাগ নদীর বাধের পাশে চমৎকার পরিবেশে ৫ বিঘা জমিতে (প্রায় ৪ লক্ষ বর্গফুট) ১২ তলা বিশিষ্ট বৃহৎ আকারের স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণাধীন ভবনের কাজ সম্পন্ন করেছে যার পাদভূমিতে ২ টি গ্যারেজে রয়েছে প্রায় ২০০ গাড়ির ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন পার্কিং ব্যবস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয়টি গতবছর থেকে তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম শুরু করলেও এই বছর তাদের সকল কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত করে। যেখানে রয়েছে উন্নত মানের লাইব্রেরি, অডিটোরিয়াম, উন্নতমানের ক্লাস রুম, ল্যাব, ক্যাফেটেরিয়া, সুইমিং পুল, জিমনেসিয়ান, টেনিস কোর্টসহ বিভিন্ন রকমের সু্যোগ সুবিধা, রয়েছে বিনামূল্যে বিভিন্ন রুটে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাস সুবিধা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন ক্রমে এখানে ব্যাচেলর অফ অনার্স প্রোগ্রামে রয়েছে এপারেল মেনুফেকচারিং এন্ড টেকনোলজি, ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড টেকনোলজি,নিটোওয়ার মেনুফেকচারিং এন্ড টেকনোলজি, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড মেনেজমেন্ট, বিবিএ,ইংরেজি অনুষদ মাস্টার্স প্রোগ্রামে আছে টেক্সটাইল, এএমটি, এফডিটি।

এছাড়াও প্রস্তাবিত ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদগুলোর মধ্যে রয়েছে মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল, সিভিল, আর্কিটেকচার, কম্পিউটার সায়েন্স। যা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন এক মাত্রার সূচনা করবে বলে প্রশাসন আশাবাদী অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের বাহিরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সাথে শিক্ষাবিষয়ক সমঝোতা চুক্তি শিক্ষার মানকে আরো তরান্বিত করেছে এর মধ্যে রয়েছে ভারতের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি যা গত ৬ বছর পূর্বে ২ দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতীতে সাক্ষরিত হয়, চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ও চীনের উপ-প্রধান এর উপস্থিতীতে সাক্ষরিত হয়।

এছাড়াও চীনের লিয়াউনিং কমিউনিকেশন ইউনিভারসিটি ও জিজিয়াং সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি। নেদারল্যান্ড এর সেক্সন ইউনিভারসিটি, দক্ষিণ করিয়ার হ্যান্সিও ইউনিভারসিটি, চেক প্রজাতন্ত্রর টেকনিকাল ইউনিভারসিটি অব লিবেরিস, অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি ও ডিকন ইউনিভারসিটি ডেনমার্কের ডিএম এন্ড টি।

এছাড়াও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা ও অনস্বীকার্য যার মধ্যে রয়েছে নেদারল্যান্ডস এর মিনিস্টার অব ফরেইন ট্রেড এন্ড ডেভেলপমেন্ট কো-অপেরশন ও এমডিএফ ট্রেইনিং এন্ড কন্সাল্টেন্সি কোলাবরেশন ফর সিএসআর, যুক্তরাষ্ট্রের গারবার টেকনোলজি ও বাংলাদেশের আমেরিকান এন্ড এফিয়ার্ড লিমিটেড ও ব্লিটিশ কাউন্সিল। পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিইউএফটি এর শিক্ষার্থীরা সহশিক্ষা কার্যক্রমেও যথেষ্ট দক্ষ। আগামীদিনের নেতৃত্ব তৈরিতে নেতৃত্বপ্রদান, নেগোসিয়েশ, নেটওয়ারকিং, অরগানাইজিং, টিম ওয়ার্কসহ নানা রকম দক্ষতা অনুশীলন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবগুলোর। রয়েছে প্রায় ২০টির বেশি ক্লাব তার মধ্যে রয়েছে মডেল ইউনাইটেড ন্যাশনস, ডিবেট ক্লাব, এপারেল ক্লাব, ইংরেজি ক্লাস, ইত্যাদি।

শুধু তাই নয় এই দক্ষতাকে পুঁজি করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করছে বিইউএফটির শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষার্থীকে আর্থিক ও সব রকমের সহযোগিতা দিয়ে পাশে থাকে ও দিক নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষা ব্যবস্থার মান নিশ্চয়তায় দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পাঠ্যক্রম বিষয়ক পর্যালোচনা, শিক্ষকদের পারফরমেন্স মুল্যায়নে নানা রকম পদক্ষেপ ও শিক্ষক নিয়োগে কঠোর পরীক্ষা পদ্ধতি অবলম্বনসহ মানসস্মত শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে।

অপরদিকে রানা প্লাজার মর্মান্তিক ঘটনার পর আরএমজি খাত নৈতিক ও পরিবেশগত মান নিশ্চিত করতে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিল যা অনেক আংশে কমিয়ে আনতে বিইউএফটি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন প্রজেক্ট যেমন কর্পোরেট সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটি, এসআরএইচআর ইত্যাদি।

বিইউএফটি নির্ধারিত সময় অন্তর অন্তর বিভিন্ন বিষয় এবং ভিন্ন ভিন্ন একাডেমিক জার্নাল প্রকাশ করে থাকে ইতিমধ্যে দুটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে এবং তৃতীয়টি প্রকাশনার অপেক্ষায় রয়েছে।

Bootstrap Image Preview