শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সের দায়িত্বে অবহেলার কারণে একজন ডায়রিয়া রোগীর মৃত্যুরর অভিযোগ তুলেছেন মৃত ব্যাক্তির স্বজনরা।
বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টায় হাসপাতালে ভর্তি ওই রোগীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফোসে ওঠেন অন্যরাও। এ সময় মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীসহ অন্যরা প্রায় দুই ঘণ্টা সময় ধরে হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের ঘেরাও করে রাখে। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের প্রতিশ্রুতিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিকে আসে।
জানা যায়, গত বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার কালীঘাট ইউনিয়নের অন্তর্গত ফিনলে টি কোম্পানীর ভাড়াউড়া ডিভিশনের ভূড়ভূড়িয়া চা বাগানের শ্রমিক পারশ মৃধা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে প্রথমে বাগানের ডিসপেনসারিতে ভর্তি করা হয়। দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো চা বাগানের ডায়রিয়া পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে বাগান ডিসপেনসারিতে আসেন। এ সময় পারশ মৃধার অবস্থার অবনতি দেখতে পেয়ে তিনি ওই রোগীকে সরকারি হাসপাতালে প্রেরণের নির্দেশ দেন। সাথে সাথে পারত মৃধাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
মৃত পারত মৃধার ছেলে রিপন মৃধা অভিযোগ করে বলে, হাসপাতালে তার বাবাকে কয়েকটি স্যালাইন দেওয়া হলেও রাত ১২টার পর আর কোন স্যালাইন দেওয়া হয়নি। এমনকি তার অবস্থার খবরও কেউ নেয়নি। রাত ২টার দিকে তার বাবার অবস্থার আরো অবনতি হলে সে হাসপাতালের ডিউটি রুমে গিয়ে দেখে রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ আছে। রিপন ডিউটি রুমের দরজায় অনেক ডাকাডাকি করে আবার ফিরে আসে।
এভাবে বেশ কয়েকবার রিপনের চিৎকারে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্যান্য রোগীর সাথে থাকা স্বজনরাও এগিয়ে আসেন। তারা সকলে মিলে দরজায় জোরে ধাক্কা দেওয়া শুরু করেন এবং দরজা ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেন। এমন সময় ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে গীতা রানী চোখ মুছে মুছে দরজা খুলে তাদেরতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন।
রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক জেনেও তিনি হাত-মুখ ধোয়া ও ড্রেস পাল্টানোর বাহান ধরে আরো ১ ঘণ্টা বিলম্ব করেন। ভোর পৌনে ৫টার দিকে গীতা রানী পারশ মৃধাকে মৃত ঘোষণা দিয়ে চলে যান। এর প্রায় ১০ মিনিট পরে পারত মৃধা আবারও শ্বাস প্রশ্বাস নিতে দেখা যায়। এ অবস্থায় আবারও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডাকলে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালে অন্যান্য রোগীদের মধ্যে আসমা বেগমের সাথে থাকা শাহ আলম (২৫), মজিদ মিয়ার সাথে থাকা শেকুল মিয়া, বিউটি আক্তারের সাথে থাকা আব্দুস শহীদ ও মালতী দেবনাথের সাথে থাকা রনি দেবনাথও ওই নার্সের বিরোদ্ধে একই রকম কথা বলেন।
পরবর্তীতে ভোর ৫টা হতে সকাল ৭টা পর্যন্ত সাধারণ জনগণ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ঘেরাও করে ফেলে। পরে ভাড়াউড়া ডিভিশনের ডিজিএম জি এম শিবলী, কালীঘাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালা, ইউপি সদস্য শাওন পাশী, মিতু রায়, ভূড়ভূড়িয়া চা বাগান পঞ্জায়েত সভাপতি সুধীর রিকিয়াশন, বিডিইআরএম এর কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনিল কুমার মৃধা, শ্রীমঙ্গল থানার এসআই রুকনুজ্জামান, মৃত ব্যাক্তির ভাই কাশীনাথ মৃধা ও ছেলে রিপন মৃধার উপস্থিতিতে একটি জরুরী বৈঠকে ঘটনার সত্যতা খোঁজে পাওয়া যায়।
এ সময় উপস্থিত ব্যাক্তিদের আনত অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো নার্স গীতা রানী দাশের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধঃতন কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে আশ্বস্থ করেন।