Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ট্রাম্পকে হারালেন মোদি!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৫:৪৪ AM
আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৫:৪৪ AM

bdmorning Image Preview


যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম পাওয়ার পথ উন্মুক্ত করেছে ভারত। সব সংশয় সম্প্রতি নয়াদিল্লির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এ-সংক্রান্ত একাটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ভারত সাঁজোয়া পর্যবেক্ষক ড্রোনের মতো উচ্চ প্রযুক্তির স্পর্শকাতর সামরিক সরঞ্জাম পেতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ চরিত্রের কারণে ভারত অনেকটা সন্দেহাতিত ছিল। তাছাড়া এমন সন্দেহের অন্য কারণগুলোর মধ্যে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা এবং পাকিস্তান-আফগানিস্তান প্রসঙ্গই উল্লেখযোগ্য। রাশিয়া ও ইরানের ওপর মার্কিন অবরোধ চলছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারত সফর করেন। এ সফরেই স্বাক্ষরিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ভারতের স্পর্শকাতর সামরিক সরঞ্জাম পাওয়ার চুক্তি।

আন্তজার্তিক গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বলা যায়, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করা, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের মতো সিদ্ধান্তগুলো এই সম্পর্ক পরিবর্তনে প্রভাব ফেলেছে। আর ট্রাম্পের এসব সিদ্ধান্তই তাঁর গায়ে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমা সেঁটে দিয়েছে। লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কন্ট্রোল রিস্ক-এর ভারত ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পরিচালক প্রত্যুষ রাও বিবিসিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সময় ভারতের প্রতিনিধিদের অবশ্যই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ ট্রাম্পের বিস্ময়কর সিদ্ধান্তগুলোর কথা মাথায় থাকে।

ভারতের সঙ্গে এই চুক্তি করার আগে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই নয়াদিল্লির সঙ্গে মস্কো ও তেহরানের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি ভেবেছে। মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির সামরিক ঘনিষ্ঠতার বিরোধিতাও করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকা রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের চুক্তির বিরোধী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ভারত গত পাঁচ বছরে যে পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে, তার শতকরা ৬২ ভাগই কিনেছে রাশিয়ার কাছ থেকে।

এ ছাড়া নয়াদিল্লি মস্কোর কাছ থেকে বিমান বিধ্বংসী এস-৪০০ মডেলের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, ভূমি থেকে আকাশে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনা নিয়ে আলোচনা করছে। রাশিয়ার কাছ থেকে প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে অত্যাধুনিক এই আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ক্রয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ভারত। এটা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন মনঃক্ষুণ্ন হলেও সেদিকে তাকায়নি মোদির ভারত। ভারতের কূটনীতিকেরা বলছেন, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। ভারতের নিরাপত্তার জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে ইরান এই মুহূর্তে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ জ্বালানি তেল বিক্রেতা দেশ। ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র চায় আগামী নভেম্বরের মধ্যে সব দেশ ইরানের কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করুক। কিন্তু মোদির জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন। কারণ, ইরানের কাছ থেকে দেশটি যে পরিমাণ তেল আমদানি করে, সেই বাজার নতুন করে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তেলের দাম নিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বেকায়দায় আছেন মোদি। তেলের দাম বেড়েছে ভারতে। একে কেন্দ্র করে কয়েক দিন আগে ভারতজুড়ে বন্ধ পালন করেন কংগ্রেসসহ কয়েকটি দল। এ ছাড়া তেল আমদানি কমালে ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কাও রয়েছে মোদির। ভারত ইরানে চাবাহার বন্দর নির্মাণ করছে। আফগানিস্তানে প্রবেশের জন্য এই বন্দর ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে হয়তো ভারত ইরানের কাছ থেকে তেল আমদানির পরিকল্পনার বিষয়ে ‘চুপচাপ’ থাকার নীতিই নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের সর্বশেষ চুক্তিকে ঘিরে দুই পক্ষের দর-কষাকষি ও স্বার্থ রক্ষার কথা বিবেচনা বলা যায়, এ যাত্রায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মোদিই জিতেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অগ্রাহ্য করে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থানই ধরে রাখতে পেরেছে নয়াদিল্লি। ট্রাম্প প্রশাসন নিজের অবস্থানে শুরুতে কঠোর থাকার চেষ্টা করলেও পরে নমনীয় হতে অনেকটা বাধ্য হয়েছে। তবে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ ট্রাম্পের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হয়, সেটাই দেখার বিষয়।

Bootstrap Image Preview