Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

যৌতুক ও আমরা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:৫৫ PM
আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:৫৫ PM

bdmorning Image Preview


‘স্কোর’, অর্থাৎ, যৌতুক। দেশের একটা বড় অংশে এখনও প্রকাশ্যে যৌতুক নিয়ে আলোচনা হয়। পণপ্রথা একটি স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে গ্রাহ্য হয় এবং বিশ্বাস করা হয়, মেয়ের অর্থ ‘দায়’। সুতরাং, কন্যা‘দায়’গ্রস্ত পিতাকে ‘দায়’মুক্ত হতে হলে যৌতুক তো দিতেই হবে!

পণপ্রথা সমাজের একটি মারাত্নক ব্যাধি। সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে। কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি। খাপ পঞ্চায়েতের দেশে লাভ হওয়ার কথাও নয়। জমি-বাড়ি ছেড়ে একঘরে হতে না-চাইলে গ্রামীণ নিয়ম মেনে চলতেই হয়। শুধু তা-ই নয়। মেয়ে মানেই এখনো অধিকারহীনতা অর্থাৎ, ‘দায়’। দায় এমনই যে, বিয়ের মন্ত্রে কন্যাকে সম্প্রদান করতে হয়। অর্থাৎ, পিতাগৃহ থেকে স্বামীগৃহে হস্তান্তরিত হয় মেয়েদের ভাগ্য। ভাগ্য হস্তান্তরের কিছু ঝক্কি থাকে। কিছু দাবি থাকে।

সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন উত্তর শার্শা গ্রামের শাহানারা খাতুন (২০) সেই ঝক্কি সামলাতে পারেননি। ২০১৬ সালের আগষ্ট মাসে তার সঙ্গে উত্তর শার্শা গ্রামের অমেদ গাজীর ছেলে আসাদুলের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়া হয়। এছাড়া সোনার গহনাসহ পরবর্তীতে জমি বন্দক রাখার জন্য ৪০ হাজার টাকাও আসাদুলকে দেওয়া হয়। শাহানারাকে দেওয়া হয় একটি মোবাইল ফোন। বিয়ের পরপরই বড় ভাই আজাহারুলের সঙ্গে আসাদুল মালয়েশিয়ায় চলে যায়। বিয়ের পর থেকে আসাদুল ও তার পরিবারের সদস্যরা শাহানারাকে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করতো। টাকা দিতে না পারলে তাকে  মানসিক ও শারিরিকভাবে নির্যাতন চালানো হতো।  

গত ১৫ সেপ্টেম্বর শনিবার রাত ১০ টার দিকে শাহানারার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শ্বাশুড়ি চন্দনা বিবি, বড় ননদের স্বামী চৌরাস্তার নূর হোসেন, চাচা শ্বশুর তাকে নির্যাতনের পর গলায় দড়ি দিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে পালিয়ে গেছে। (এলাকাবাসির তথ্য মোতাবেক) 

একপর্যায়ে গ্রামবাসি দড়ি কেটে মুমুর্ষ শাহানারাকে রাতেই সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে ১৬  সেপ্টেম্বর রবিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কম-বেশি সব মেয়েকেই এইসব অত্যাচার সহ্য করতে হয়। কেউ মুখ বুজে মানিয়ে নিতে পারেন। কেউ ‘ব্যালেন্স’ করতে পারেন। কেউ হেরে যান শাহানারার মতো।

এদিকে গতকাল রবিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি ‘যৌতুক নিরোধ বিল-২০১৮’ নামের বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। যেখানে যৌতুক গ্রহণ, যৌতুক প্রদান, সহায়তা বা চুক্তি করলে কিংবা যৌতুক নিয়ে মিথ্যা মামলা করলে ৫ বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। 

শাহানারা হয়তো জানেই না এই আইনের কথা। তার পরিবার হয়তো তার আত্নাকে শান্তি দেয়ার জন্য তার জন্য সঠিক বিচার পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থাটাও করতে পারবেনা। আইন কি তাহলে আপেক্ষিক? বাস্তবিক গ্রহণযোগ্যতার অভাবে শাহানারার মতো অভাগীদের মৃত্যুর সাক্ষী হয়েি থাকে? 

শুধু শাহানারা নয়, গতকাল ১৬ সেপ্টেম্বর  নাটোরের গুরুদাসপুরে যৌতুকের জন্য রিনা বেগম (২২) নামক এক গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা করেছে  স্বামী রনি ইসলাম (২৫) এমন ঘটনাও পাওয়া যায়। 

শাহানারা, রিনা এমন হাজার সব অভাগীদের চিত্রের কাছে আইনের অবস্থানটা ঠিক কোথায় সেই প্রশ্নটায় বারবার ঘুরে ফিরে সামনে আসছে। নতুন আইনের পাসের ঘটনার পাশাপাশি চলে গেলো দুটি প্রাণ। নতুন আইনের যদি দেখার চোখ থাকে তাহলে যাত্রাটা শুরু হোক শাহানারা আর রিনার বিষাদের স্মৃতি নিয়ে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোক এই আইন যেনো এমনভাবে অভাগীদের হারাতে না হয়। 

Bootstrap Image Preview