Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সেলিম ওসমানের আসনে লড়াইয়ের ঘোষণা দিলেন ভাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৪৫ AM
আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৪৫ AM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


এবার জাতীয় পার্টি থেকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন পারভীন ওসমান। গত শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) তিনি স্বামী প্রয়াত নাসিম ওসমানের কবর জিয়ারত করে নির্বাচনী প্রচারণায় নামছেন।

প্রয়াত এমপি এ কে এম নাসিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে লাঙল প্রতীকে ৪ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান নাসিম ওসমান।

পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপনির্বাচনে লাঙল প্রতীকে নির্বাচিত হন তারই ভাই এ কে এম সেলিম ওসমান। বর্তমান সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমান সম্পর্কে পারভীন ওসমানের দেবর। তিনিও আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন-প্রত্যাশী।

পারভীন ওসমানের দাবি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাকে এখানে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে আগামী নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন নিয়ে দেবর-ভাবির লড়াই প্রকাশ্যে এল।

জাপা সূত্রে জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর এরশাদের বারিধারার বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন পারভীন ওসমান। নারায়ণগঞ্জে ফিরে তিনি দাবি করেন এরশাদ তাকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে দলের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার নাসিম ওসমানের কবর জিয়ারত করে নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন এবং নিজের মনোনয়ন-প্রত্যাশা ঘোষণা করেন পারভীন ওসমান।

পারভীন ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান তার ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসেও এরশাদের সঙ্গে তার সাক্ষাতের তথ্য জানান। এ সময় বিভিন্ন বিষয়ে পারভীন ওসমানের সঙ্গে এরশাদের আলোচনা হয়। আলোচনায় শুরুতেই প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোর স্মৃতিচারণ করেন এরশাদ।

এ সময় এরশাদ পারভীন ওসমানের পারিবারিক খোঁজখবর নেন। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির অবস্থান সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করেন এরশাদ। আলোচনার একপর্যায়ে পারভীন ওসমানকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে কাজ করার দিক নির্দেশনা দেন।

এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের পারভীন ওসমান বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আমাকে দলের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কারও বিরোধিতা নয় আমি দলের পক্ষে কাজ করতে নেমেছি।’

এদিকে এরই মধ্যে নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমানকে নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল থেকে কানাঘুষা শুরু হয়। এখানকার জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মী তাকে মনোনয়ন চাইতে অনুপ্রাণিত করে আসছেন। সম্প্রতি ঢাকায় এরশাদের জনসভায় মিছিল নিয়ে যোগ দেন পারভীন ওসমান। এরশাদ বেশ কয়েকবার পারভীনকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে যান। সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকার বাসায় এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পারভীন ওসমান।

ভাবির নির্বাচনের ঘোষণার পর গতকাল শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ রাইফেলস ক্লাবে জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সেলিম ওসমান।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাপা সূত্রে জানা যায়, এই আসনের আওয়ামী লীগের নেতাদের একটা অংশ সেলিম ওসমানকে নির্বাচনে চাইছেন। গতকাল রাতের সভায় পাওয়া মতামত থেকে সেলিম ওসমান নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের ২০৮ নং নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ১১ নং ওয়ার্ড থেকে ২৭ নং ওয়ার্ড এবং দুইটি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন (আলীরটেক, গোগনগর, মদনপুর, ধামগড়, মুছাপুর, কলাগাছিয়াা, বন্দর) ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।

এ আসনের প্রতিটি এলাকায়ই প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের সহধর্মিনী পারভীন ওসমানের কাছে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। নাসিম ওসমান এমপি থাকাকালীন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষের সাথেই দীর্ঘদিনব্যাপী পরিচয়ের সুযোগ হয়েছে পারভীন ওসমানের সাথে।

পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৮৪ সাল, ১৯৮৮ সালের নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এমপি ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নাসিম ওসমান। ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য একেএম নাসিম ওসমান তৃতীয় বারের মতো নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল ভারতের দেরাদুনে হঠাৎ নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জয়ের ধারা অব্যাহত ছিল। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপনির্বাচনে লাঙল প্রতীকে নির্বাচিত হন তারই ভাই এ কে এম সেলিম ওসমান।

কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এখানে নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ।

তবে এবার আর জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দিতে রাজি নন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী করার দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন দলের জাতীয় পরিষদ সদস্য আনিসুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, সহ-সভাপতি আবদুল কাদির, আরজু রহমান ভুইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আবু সুফিয়ান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা ও সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত।

তাদের সঙ্গে একই দাবি তুলছেন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনও।

ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইও। দলের বেশ কজন নেতা নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ করছেন।

Bootstrap Image Preview