শ্রীমঙ্গলের স্বনামধন্য তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মুখোমুখি পৌরসভার একমাত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্তুপ। আর এই স্তুপের ময়লা আর্বজনার প্রচন্ড দুর্গন্ধে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ নানাবিধ সমস্যায় হাজার হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থী পথচারীসহ স্থানীয় এলাকাবাসী। শুধু তাই নয়, আর্বজনার স্তুপের প্রচন্ড দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ব্যাহত হচ্ছে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর লেখাপড়া।
বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে এই ভাগাড় অপসারণের দাবিতে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় জনতাসহ কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্যে কবি সাহিত্যিক শিক্ষক জহিরুল মিঠু বলেন, অবিলম্বে এই ময়লার ভাগাড় স্থানান্তরিত না করলে আমরা শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনসাধারণকে নিয়ে মানববন্ধন অব্যাহত রাখবো।
তিনি আরও বলেন, এই শহর আমার এই শহর সকলের। আগামীর শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠতে সুস্থ সুন্দর পরিবেশ ছাড়া বিকল্প নেই।
দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী এবং শিক্ষার্থীরা এই ভাগাড় অপসারণে একের পর এক মানববন্ধন করলেও কোনো সুফলই মিলছে না।
সম্প্রতি শিক্ষার্থীরা পৌরসভার ময়লার গাড়ি আটকিয়েও প্রতিবাদ করেছে। তাছাড়া স্থানীয়রাও প্রতিবাদ করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।
এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সচেতন সমাজ আন্দোলন প্রতিবাদ করলেও কর্তৃপক্ষের কোনো টনক না নড়ায় ফুঁসে ওঠেছে শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে স্থানীয় জনতাও।
শ্রীমঙ্গলে পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত কলেজ রোড এলাকায় পৌরসভার প্রায় এক-একর পতিত জমি। শহরের সব ময়লা-আর্বজনা পৌরসভার পরিছন্ন কর্মীরা পৌরসভার গাড়ি দিয়ে প্রতিদিনই এখানে ফেলছে। আর প্রতিদিন এখানে ময়লা-আর্বজনা ফেলার কারণে এই জায়গায় গড়ে উঠেছে বিশাল আর্বজনার স্তুপ। সেই স্তুপ থেকে আসা দুর্গন্ধে অতিষ্ট স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ ও দি বাডস রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং পশ্চিম পাশে আছে গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসাসহ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজে প্রায় ৫ হাজার, দি বার্ডস রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১ হাজার ২০০ ও গাউছিয়া শফিকিয়া সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিদিন স্কুল কলেজের আসা যাওয়ার পথে নাকমুখ চেপেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে হচ্ছে তাদের। শুধু তাই নয়, প্রতিটি শ্রেণির কক্ষের ভিতরেও পৌঁছে যাচ্ছে ময়লার আবর্জনার দুর্গন্ধ। ফলে প্রচন্ড দূর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন, অভিভাবকসহ পথচারীরা। অবিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে ওই জায়গা অতিক্রম করার সময় প্রচন্ড দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরে যেতে হয়। প্রায়শই অতিরিক্ত দুর্গন্ধের কারণে ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এদিকে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই প্রচন্ড দুর্গন্ধ চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়ায় দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পার্শ্ববর্তী এলাকাবাসীও।
শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী নোমান আহমেদ জানান, ময়লার প্রচন্ড দুর্গন্ধে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করাটা কষ্টকর। শুধু তাই নয়, কলেজে ক্লাস করাটা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই শিক্ষার্থী আরও জানান, প্র্যাকটিকেল ক্লাসে গিয়ে নাক-মুখ চেপে ক্লাস করতে হচ্ছে। আমাদের এতে করে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসেই বমি করে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের নিকট শিক্ষার্থীদের দাবি অতি শীঘ্রই যেন কলেজের সামনে থেকে এই ময়লার স্তুপ অপসারণ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
আর ময়লা স্তুপের আশেপাশের বাসিন্দারা বলেন, জোরে বাতাস বইতে শুরু করলে ঘরের ভেতর পর্যন্ত গন্ধ ঢোকে। তখন দম নেওয়া যায় না। কিন্তু কিছু করার নাই। ঘরবাড়ি ছেড়ে তো যাওয়া যায় না, তাই থাকি।
শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আব্দুল মালেক বলেন, অতিরিক্ত দুর্গন্ধের জন্য শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অসুবিধা হয়। পরীক্ষার সময় দুর্গন্ধের জন্য পরীক্ষা দিতে তাদের জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ মারাত্মক দুর্গন্ধের কারণে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের নিউমোনিয়া ও বয়োবৃদ্ধ লোকজনের মধ্যে শ্বাসকষ্ঠ জনিত রোগব্যাধি হতে পারে।
দি বার্ডস মডেল স্কুল এন্ড কলেজ এর অধ্যক্ষ লে. কমান্ডার জাফর আহমদ (অব.) অভিযোগ করে বলেন, পৌরকর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানোর পরেও কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। পৌরসভার কাজ ময়লা আর্বজনা পরিস্কার করা। সকল সমস্যা দূর করা । কিন্তু তারা উল্টো শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগে ফেলছেন।
দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ময়লার ভাগাড় এই স্থান থেকে সরিয়ে নিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন শিক্ষক ও সমাজকর্মী তারিক হাসান অপু অনেকটা ক্ষুদ্ধ হয়েই জানান, এই ময়লার ভাগাড়ের কারণে স্থানীয় জনতা থেকে শুরু করে দুর্ভোগে পোহাচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করতে এসে অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে অনেক শিক্ষার্থী। আবার অনেকে ক্লাসেই বমি করছে। বিভিন্নভাবে এটা নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ স্থানীয় জনগণ, তবু কেন কর্তৃপক্ষ এ সমস্যার সমাধান করছেন না?
এ ব্যপারে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসীন মিয়া মধু বলেন, ময়লা ফেলার স্থানটি এই জায়গা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ২০১২ সালে হাওরে নতুন আরেকটি জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। টাকাও জমা দেওয়া হয়েছে। স্থানান্তররের জন্য সেই সময়ে আমি মালামালও সেই অধিগ্রহণকৃত জায়গায় পাঠিয়েছিলাম কিন্তু একটি কুচক্রী মহল সেই মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ বিষয়ে আমি শ্রীমঙ্গল থানায় একটি মামলাও করেছিলাম কিন্তু কোনো এক রহস্যজনক কারণে পুলিশ এ বিষয়ে কোনো ভূমিকাই পালন করেনি।
গেজেট হওয়ার আগে জমি নিয়ে মামলা হওয়ায় স্থানান্তরের কাজটি আটকে গেছে। মামলা শেষ হলে খুব শীগ্রই স্থানান্তর করা হবে।
বছরের পর বছর এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ। দুর্গন্ধে পথচারীদের দূর্ভোগের পাশাপাশি রয়েছে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা। এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সরকারের উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক এলাকার সচেতন মহল।