Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আছেন সিঙ্গাপুরে, গাড়ি ভেঙেছেন গাজীপুরে!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৩৮ AM
আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৪৬ AM

bdmorning Image Preview


গত সোমবার সকাল আটটায় সিঙ্গাপুরে যান। গত সোমবার বেলা ১১টায় গাজীপুর জেলা শহরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মানববন্ধনে লাঠিপেটা করে পুলিশ। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যানবাহন ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রাতে মামলা করে গাজিপুর পুলিশ। সেই মামলায় সিঙ্গাপুরে থাকা এক নেতাকেও আসামি করা হয়েছে। তিনি হলেন গাজীপুর জেলা শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম।

একই ধরনের মামলার অভিযোগ উঠেছে শ্রীপুরে। সেখানে সোমবার সন্ধ্যায় নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজ কাইয়াকে আসামি করা হয়েছে। অথচ তাঁর স্বজনেরা বলেছেন, তিনি চিকিৎসার জন্য এক সপ্তাহ ধরে ভারতে অবস্থান করছেন।

এদিকে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, শাহজাহানপুর ও রামপুরা থানার পৃথক পৃথক মামলায় গ্রেপ্তার আরও ৩২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন ঢাকার আদালত। এর মধ্যে শাহবাগ থানার করা মামলায় ২২ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বাছেদ মিয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনে এই মামলা করেন। এতে ১৪০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। কাজী সাইয়েদুল ৩৪ নম্বর আসামি।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে সোমবার সকালে গাজীপুর জেলা শহরে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধন শুরু হলে হঠাৎ পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে এবং ঘটনাস্থল থেকে নয়জনকে গ্রেপ্তার করে। ওই ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা প্রদান, রাস্তায় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যানবাহন ভাঙচুর ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে বিএনপির ৪৪০ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। এতে অন্যতম আসামি হলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম, গাজীপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দিন, কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফয়সাল আহমেদ সরকার, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হান্নান মিয়া ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়া।

সিঙ্গাপুরে থাকা কাজী সাইয়েদুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে অনেক দিন ধরে অসুস্থ। সে জন্য সোমবার সকাল আটটায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তিনি সিঙ্গাপুরে যান। পরে জানতে পারেন জয়দেবপুর থানায় তাঁর নামে মামলা হয়েছে।

মামলার বাদী জয়দেবপুর থানার এসআই বাছেদ মিয়া জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি মামলার বাদী হয়েছেন। কাকে আসামি করা হয়েছে, তা জানেন না।

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সবুর বলেন, যদি বিদেশে থাকা কাউকে আসামি করা হয়ে থাকে, তবে তদন্ত করে মামলার পরবর্তী ধাপে নাম বাদ দেওয়া হবে।

শ্রীপুরে বিএনপির ৪৮ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। সোমবার রাতে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চলা মিছিল থেকে বিস্ফোরণ ঘটানো ও মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগে এই মামলা হয়েছে। ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মামলার ১৭ নম্বর আসামি হলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজ কাইয়া। কিন্তু তাঁর ভাগনে আছির উদ্দিন বলেন, ‘মামা চিকিৎসার জন্য এক সপ্তাহ ধরে ভারতে অবস্থান করছেন।’ এটি সাজানো মামলা বলে তিনি জানান।

কেন্দ্রীয় বিএনপির সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে ছিলাম। অথচ আমার বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হয়েছে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে অন্যদের আসামি করা হয়েছে। তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় ওই ব্যক্তিরা নাশকতায় জড়িত নন, তবে অভিযোগপত্র থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে।

অপর দিকে গতকাল ঢাকার আদালতে দেখা যায়, দুপুরের দিকে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রিজন ভ্যানে করে আদালতের হাজতখানায় আনে পুলিশ। যাঁদের রিমান্ড চাওয়া হয়, তাঁদের হাজতখানা থেকে আদালতে তোলা হয়। রিমান্ড শুনানি শেষে আবার যখন হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনদের কেউ কেউ হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। গতকাল দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনেরা আদালত ও হাজতখানার সামনে ভিড় করেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দলটির মানববন্ধন চলাকালে ও শেষে ধরপাকড় করে পুলিশ। গতকাল দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের জানান, ঢাকার মৎস্য ভবন, কাকরাইল মোড়, পল্টন মোড়, সেগুনবাগিচা ও হাইকোর্ট মোড় থেকে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। গাজীপুরসহ বেশ কিছু জায়গায় বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতে পুলিশ অতর্কিতে হামলা ও ‘গুলি’ চালিয়েছে।

Bootstrap Image Preview